পূর্বে পাহাড় পশ্চিমে সাগর
মধ্যখানে সৌন্দর্য্যে গড়া সমতল ভূমিতে বৃহৎ, ক্ষুদ্র শিল্প কারখানার মাঝে লোনা জ্বল মিশ্রিত নদীর জল তরঁঙ্গ ও গুল্মলতায় মুড়ানো পাহাড়ি বনভূমির মাঝে পুরোনো সভ্যতাকে আলিঙ্গন করে আছে সনাতনী সম্প্রদায়ের আদি নিদর্শন মঠ-মন্দির। হাজার বছর পুরোনো তীর্থ ভূমি দেব-দেবতাদের পূণ্য স্থানের স্বীকৃিত দাঁড়িয়ে রয়েছে হাজার বছর ধরে। মোঘল, ইংরেজ, পাকিস্তান শাসন থেকে ক্ষুদ্র জনবসতি জড়িয়ে গড়ে উঠা শিল্পাঞ্চল আজও বিরাজমান। অন্যদিকে বারআউলিয়ার মাজার পুণ্যভূমি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে সর্বত্র। পর্যটন কেন্দ্রের সাথে কর্মসংস্থানে পরিপূর্ণতা পাওয়া দেশী-বিদেশী সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের রয়েছে তীঘ্ন দৃষ্টি। শিল্পাঞ্চলের সাথে পর্যটনের নাম-ডাক সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ায় বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠে ঐতিহ্য নির্ভর সীতাকুণ্ড। ফলে বনের সাদৃশ্য পাহাড় ঘেরা প্রকৃতি সৃষ্ট সুন্দর্য অবলোকনে ভীড় জমিয়ে পাহাড় ও সমুদ্রে উপচে পড়ছে পর্যটকরা।
বোটানিক্যাল গার্ডেন ইকোপার্ক, গুলিয়াখালী সীবিচ, ছোট দারোগারহাট সহস্রধারা, চন্দ্রনাথ ধাম, ভাটিয়ারী সানসেট পয়েন্ট, কুমিরা ফেরী ঘাট ব্রীজ ও পোর্টকানেকটিং বীচ,বারআউলিয়া মাজার সহ সকল পর্যটন কেন্দ্রে বছরজুড়ে থাকছে পর্যটকের ভারে সরগরম।
প্রকৃতির নিজস্ব সাঁজে গড়া পাহাড় ও সমুদ্রের সুন্দর্য্য অবলোকনে দিনপার করে ভ্রমণ পিয়াসুরা। প্রত্যান্ত অঞ্চল হতে পৌরসদরে পা ফেললে ৩ কিলোমিটারের ব্যবধানে মিলবে ৩ টি পর্যটন কেন্দ্র। স্থানীয় যানবাহনে ১ কিলোমিটার দক্ষিনের পথে ফকিরহাট সামন্য দক্ষিনে রাস্তার পূর্ব দিকে হেঁটে চললে দৃশ্যমান হয়ে উঠে পাহাড় ঘেরা বোটানিক্যাল গার্ডেন ইকোপার্ক। কোলাহল মুক্ত নির্জনতার মাঝে এলোমেলো পথের শুরুতে চোখ জুড়াবে বনবিভাগের অফিসের চারপাশের সু-দর্শন গোলাপ বাগান, কাজী নজরুল ভাস্কর্য, শিশুপার্ক ও চন্দ্রনাথ ধাম, ইকোপার্কে ও মানচিত্র। এরপর উঁচু-নিঁচু টিলা বেয়ে উপরে উঠতে মন জুড়িয়ে পাগল করে তুলবে দেশী-বিদেশী বৃক্ষের মাঝে স্থাপিত বিশ্রামগার ও সহস্রধারা ঝর্ণা। প্রায় ৩’শ সিড়ির উপরে পাহাড় বেধ করে বেরিয়ে আসা মনোমুগ্ধকর ঝর্ণা ধারার দৃশ্য। এটি দেখতে ভূল করলে মিস করতে হবে পার্কে ঘুরার স্বাদ। ভ্রমনের পরিপূর্নতা লাভে শত কষ্টের মাঝেও ঝণার্র পাড়ি জমাতে পিছ-পা হয় না শিশু, কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী ও বৃদ্ধরা।
এছাড়া পড়ন্ত বিকেলে পাহাড়ী পথে চলতে চলতে চোখ জুড়িয়ে ভেঁসে উঠে সবুজের মাঠ আর সাগরের লোনা জ্বলের ঝিলিক। সে সাথে লাল আবায় ডুবে যাওয়া সুর্য্য রশ্মি মনে তাক লাগানো দৃশ্য চীর স্থায়ী হয়ে গাধবে হৃদয়ের মনি কৌটায়। এভাবে ভুতুড়ে পথ পাড়ি দিয়ে উচ্চ শিখরে পৌঁছলে উঁকি-ঝুঁকি দিয়ে অবর্তিন হবে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন চিহ্নিত হাজার বছরের পুরোনো দেব-দেবতাদের আবাসস্থান চন্দ্র নাথ ধাম। চন্দ্রনাথ ধামের নির্জনতার মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা মঠ- মন্দির জগত সৃষ্টির কালের সাক্ষী। যা যুগের পর যুগ বৃদ্যমান। তারপরও নিরাপত্তা ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাপনার অভাবে শিক্ষা নেয়া ও দেখার শেষ না হতে সন্ধ্যার ঝাঁপসা আলোয় ত্যাগ করতে হবে পাহাড়ি ভূমি।
পাহাড়ের আনন্দের সমাপ্তি ঘটিয়ে গুলিয়াখালী বীচের লোনা জলের শোঁ-শোঁ শব্দের বহমান বাতাস ঘ্রান পেতে নিতে হবে প্রস্তুতি। বীচটিতে ঘাঁস মুড়ানো বিছানার পাশে ছোট ছোট গর্তে পানির হলি খেলা ব্যাকুল করে তুলে মনমন্দির। প্রকৃতির এই শিল্প কর্ম ভিন্ন অভিজ্ঞার সঞ্চার করে দেশী-বিদেশী বিনোদন প্রেমীদের কাছে। আবেগে জড়িয়ে থাকা মানুষদের উপভোগ্য স্থানে পরিনত হওয়ায় ঈদ ছাড়াও সব সময়ই লোকে-লোকরন্য হয়ে উঠেছে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত। এই বীচে নেই বিড়ম্বনা ও টিকেট না থাকা এবং যাতায়াত সহজতর হওয়ায় রাত অবধি ঘুরপাক খেতে সমস্যা নেই দর্শনার্থীদের। উপকুলের পথ ধরে চলতে থাকলে কেউড়া বাগানে মাঝে উকি ঝুঁকি মারা মায়া হরিনের ঝাঁক চোখে-মুখে জাগায় শিহরন। সে সাথে নানা জাতের পাখির কল-কাকলির সুর লহরীর গুঞ্জনে ব্যাতি- ব্যস্ততা সময় কাটে সহজভাবে। জেলের ডিঙ্গী নৌকার সারি ভাঁসিয়ে নিবে স্বপ্নের অজানা এক রাজ্যে। আর মন মাতানো হওয়ায় কাটানো দিনের সবটুকু সময় গুজরালেও মায়া জড়ানো বীচ ছেড়ে আসা হয়ে যাই দুস্কর। যদি সরকারী বা বেসরকারী উদ্যোগে হোটেল রিসোর্টের ব্যবস্থা থাকলে জোৎনার আলোয় চোখ মেলে রাতের মিতালী দেখা সম্ভব হত। সম্প্রতি গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত সরকারি স্বীকৃতি পেয়েছে। এই বিচকে পর্যটন এলাকা ঘোষণা করলেও এখনো দৃশ্যমান কোন কাজ হয়নি। তবে, শিঘ্রই সরকারিভাবে এই বিচের মানউন্নয়নে কাজ করবে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা। সমূদ্র শেষে পাহাড়ের শিখরে দাঁড়িয়ে সানসেটের অপরুপ দৃশ্য দেখতে যেতে হবে ভাটিয়ারীর সেনাবিহীনি সংরক্ষিত বিনোদনের কেন্দ্রে। পাহাড়ি টিলার মাঝে আকা-বাকা সুন্দর্য বর্ধক লেক সহার মানাবে অতীতের সকল সুন্দর্য্যকে।
রয়েছে সেনাবাহিনীর মান সম্পন্ন রেস্তোরা।
পাহাড়ের গভীর অরণ্যে উচু টিলা বেধ করে নেমে আসা ছোটদারগারহাটের স্বহস্র ধারা ঝর্ণার সুন্দর্য্য বর্ণনাতীত। মেঠো পথ বেয়ে সকল প্রকার ঝুকি মাথায় নিয়ে স্বীকার করে গন্তব্যে শেষে আনন্দের আত্নতৃপ্তির মুছে দেবে পথের কষ্ট।
উপজেলার পাহাড় – সমুদ্র পর্যটনের মাধ্যম হলেও থাকা – খাওয়ার সু-ব্যবস্থা অভাবে বিশ্রামের বিড়ম্বনায় ভোগতে হয় পর্যটকদের। পৌরসদরে গুটি কয়েক আবাসিক ও খাওয়ার হোটেলের সু-ব্যবস্থা থাকলেও তা অপ্রতুল। ফলে থাকা- খাওয়া চিন্তায় পড়তে হয় দর্শনার্থীরা তবে, ইকোটুরিজমের স্বীকৃতি মিললে সব সমস্যা দুর হয়ে যাবে বলে মনে করেন নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব মো. গিয়াস উদ্দিন।
সীতাকুণ্ড ইউএনও বলেন,সীতাকুন্ডের মতো এতো সুন্দর উপজেলা দেশে তেমন নেই বলরেই চলে,পর্যটকদের জন্য এটি সুন্দর স্হান।অল্প খরচে অধিক আনন্দ।