ওহিদুল ইসলাম, শরীয়তপুর সদর উপজেলা প্রতিনিধি।
একটি বদলে যাওয়া হাটের কথা।
লেখক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনদীপ ঘরাই।
এই ছবিটা শরীয়তপুর সদর উপজেলার মনোহর বাজার পশুর হাটের। করোনা কালের আগে নিয়মিত কমপক্ষে দুই হাজার মানুষ সমবেত হতো এই হাটে। পাঁচশো থেকে ছয়শো গরু আর পাশের একটি স্পটে চার-পাঁচশো ছাগল নিয়ে প্রতি সোমবার বসতো এই হাট। করোনার এই দুঃসময়ে প্রান্তিক খামারিদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য স্বাস্হ্যবিধি মেনে হাট পরিচালনার সাহস ও শক্তি পেয়েছি শ্রদ্ধেয় জেলা প্রশাসক মোঃ পারভেজ হাসান স্যারের কাছ থেকে।
এরপর চিন্তা এলো, কিভাবে করবো? উত্তরটা এত সহজে পাই নি। মাছ বাজারের শৃঙ্খলা আনতে গিয়ে চিন্তাটা মাথায় আসে। প্রবেশ কিংবা বের হওয়ার জন্য একটা মাত্র পথ, লাইনে দাঁড়িয়ে ক্রেতাদের প্রবেশ আর দোকান সংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ ক্রেতাকে একবারে প্রবেশের সুযোগ দেয়া…এটুকুতেই মাছ বাজারে শৃঙ্খলা আসে।
এত বড় হাটে সেই চিন্তাটাই আকারে আয়তনে বড় করেছি শুধু।
চিন্তাটা করেছি ঠিকই, তবে বাস্তবায়নে দরকার ছিল সমন্বিত কর্মযজ্ঞ। ডিসি স্যারের সার্বক্ষণিক নির্দেশনা, সেনাবাহিনীর পেট্রোল, পালং থানার পুলিশ, বিজিবির মেজর হাবিব ভাইয়ের টিম, বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটবৃন্দ(ফাতেমা,সাইফুল, নিলয়,সালমান, বাসিত) ব্যাটালিয়ান আনসার ও আমার অফিসের সহকর্মীরা…একটা উদ্যোগে আর কি চাই। সেই সাথে গণমাধ্যমের ভাইদের কৃতজ্ঞতা, হাটের বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরার জন্য।
কিভাবে বলছি স্বাস্হ্যবিধি শতভাগ মেনেছে সবাই?
প্রথমত, হাটে ঢুকতেই সবার হাতে স্যানিটাইজার স্প্রে করা হয়েছে। মুখে মাস্ক নিশ্চিত করা হয়েছে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের। পাঁচশো গরুর খুটির স্থলে একটি বাদে একটির ট্যাগ লাগানো হয়েছে দুশো গরুর। আর ক্রেতাদের নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়াতে হয়েছে লাইনে। একবারে দুশো গরুর স্পটের তিনভাগের একভাগ অর্থাৎ ৭০ জন ঢুকতে পেরেছে হাটে। বিক্রেতাদের দেয়া হয়েছে টোকেন। টোকেনের সাথে মিলিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়েছেন তারা। ছাগলের হাটের স্পটও এই স্পটের সাথে মার্জ করেছি। পশুর জন্য একটি গেট ও মানুষের জন্য একটি গেট রাখা হয়েছে। একটি পশু বিক্রি অথবা দশজন ক্রেতা বের হয়ে গেলেই কেবল ঢুকতে পেরেছে ক্রেতা অথবা পশুসহ বিক্রেতা।
অধিকাংশ স্হানীয় হাট-বাজারেই মাস্ক পরা নিয়ে বিভিন্ন ট্রল দেখি৷ তাহলে এমন কি জাদু করা হয়েছে যার জন্য সবাই সারাদিন মাস্ক ঠিকমতো পরে ছিলো। জাদুতে নয় অবশ্য, ভয়ে। জরিমানার ভয়ে একজনও মাস্ক খোলেন নি অথবা থুতনিতে নামিয়ে রাখেন নি। ছবিতেও দেখুন, সবার মাস্ক ঠিকঠাক জায়গায়!
বিক্রি ক্ষতিগ্রস্ত হলো না তো এ অদ্ভুতুরে ব্যবস্থায়?
পরিসংখ্যান বলি…দু’শোর বেশি গরু আর তিনশোর বেশি ছাগল বিক্রি হয়েছে আজকের হাটে।
এমন কাজ দায়িত্বের চাপ বাড়িয়ে দেয়;আবার দিনশেষে সফল হলে মনে অন্যরকম শান্তি এনে দেয়।
সদর উপজেলার এ মডেল বোধ করি মন ছুঁয়েছে ডিসি স্যারের। এ মডেল ছড়িয়ে গেছে পুরো শরীয়তপুরে। ভেদরগঞ্জ উপজেলা ইতোমধ্যে সফল হয়েছে বাস্তবায়নে।