সালাহ উদ্দিন সৈকত (গাজীপুর প্রতিনিধি)। বহুল আবেগ উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে আজ বৃহস্পতিবার (২৫ মে) অনুষ্ঠিত হবে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল চারটা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে) চলবে ভোটগ্রহণ। আজই নির্ধারণ হয়ে যাবে, কে হতে যাচ্ছেন গাজীপুরের তৃতীয় নগরপিতা। এ ছাড়া নির্বাচিত হবেন সাধারণ ও সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলররা। যদিও, সিটির ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে ফয়সাল আহমেদ সরকার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার দিনগত রাত ১২টায় গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। ৯ মে থেকে টানা ১৫ দিন প্রচার চালিয়েছেন প্রার্থীরা। এ নির্বাচন গাজীপুর সিটির বাইরেও আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ২০১৩ সালে সিটি করপোরেশন গঠিত হবার পর তৃতীয় নির্বাচন এটি। এবারই এ সিটিতে সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে সব ভোটকেন্দ্রে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। নির্বাচনি আচরণবিধি অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার দিনগত রাত ১২টায় শেষ হয়েছে নির্বাচনি প্রচারণা। বন্ধ রয়েছে মোটরসাইকেল চলাচল। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। তারপরও কোথাও কোনো ব্যত্যয় ঘটলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে ইসি। প্রচারণার শুরুর আগে থেকেই ইসিকে কঠোর অবস্থানে দেখা গেছে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে। আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে দু-দফায় শোকজ করে ইসি। এর মধ্যে একবার তাকে ইসিতে গিয়ে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ভোটের আগের দিন গাজীপুর সিটির কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আজিজুর রহমানের প্রার্থিতা বাতিল করেছে ইসি। প্রার্থিতা বাতিলের কারণ হিসেবে ইসি বলছে, একটি জনসভায় নৌকা ছাড়া কাউকে ভোটকেন্দ্রে আসতে দিবেন না বলে বক্তব্য দিয়ে তিনি ত্রাস সৃষ্টি ও ভীতি প্রদর্শন করেছেন। ভোটের তিনদিন আগে গাজীপুরের নির্বাচন উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছিলেন ইসি মো. আলমগীর। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, ‘উপমহাদেশে যত ভোট হয়, সেসব ভোটের চেয়ে গাজীপুরের ভোট সর্বশ্রেষ্ঠ হবে। গাজীপুরের ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে আছে। ভোটে অনিয়ম হলে গাইবান্ধার চেয়েও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তবে, এই নির্বাচন কেমন হবে তা ভোটের দিনই বুঝা যাবে। এই সিটি নির্বাচনে সবচেয়ে আলোচিত নাম জাহাঙ্গীর আলম। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে দলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে লড়ে যাচ্ছেন। গাজীপুরের সাবেক এই মেয়র নিজে নির্বাচন করতে না পারলেও লড়ে যাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের জন্য। তিনি জাহাঙ্গীর আলমের মা। মাকে জেতাতে মরিয়া সাবেক এই মেয়র। আর তার মায়ের মুখে একই কথা, ছেলের অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে চান তিনি। সুষ্ঠু ভোটের জন্য গত রোববার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। ইংরেজিতে লেখা জায়েদা খাতুনের চিঠিটি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারকে দেওয়া হয়েছে। এর আগে, নির্বাচন কমিশন সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিতের দাবিতে চিঠি প্রদান করেন এই মেয়র পদ প্রার্থী। গতকাল বুধবার ভোটের আগের দিন জাহাঙ্গীর আলমের মায়ের ভোট নিয়ে কথা বলেন গণমাধ্যমে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন যদি সুষ্ঠুভাবে না হয়, তাহলে দেশে ও সরকারের উচ্চমহলের কাছে অভিযোগ জানাব। প্রয়োজনে বিদেশি বন্ধুদের কাছেও অভিযোগ জানাব।’ এদিকে, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খান নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী। তিনি বলেছেন, ‘আমি যেহেতু একজন রাজনৈতিক কর্মী। আমার দল একটি গণতান্ত্রিক দল। আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিশ্বাস করি। গণতন্ত্রের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল, জনগণের রায়ের প্রতিও আমি শ্রদ্ধাশীল। তাই আমার প্রিয় গাজীপুরবাসী যে রায় দেবেন, তা আমি মাথা পেতে নেব। আমি আশা করি, আমি জয় লাভ করব।’ নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন নির্বাচনি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে কথা বলেন গণমাধ্যমে। তিনি বলেন, আমরা চাই ভোটারদের উপস্থিতি, অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ একটা ভোট হোক। এটা নিয়ে আমাদের নির্বাচন কমিশনের মেসেজ হলো- সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান। এতে কোনো ধরনের ব্যত্যয় হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা এটাই করব, এটা করার জন্যই সচেষ্ট। অবশ্যই আপনারা (ভোটার) কেন্দ্রে নির্ভয়ে আসবেন।’ এই নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, ‘বৃহস্পতিবার গাজীপুর সিটি নির্বাচন মনিটরিং করা হবে। অলরেডি কেন্দ্রে কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। মনিটরিংয়ে আমরা যদি কোনো অনিয়ম পাই, তাহলে সেটা আমরা অবশ্যই আমলে নেব। এটার বিষয়ে কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব করব না।’ আয়তনের দিক দিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় সিটি করপোরেশন এই গাজীপুর। মেয়র, ৫৭টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর ও ১৯টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদের ভোটগ্রহণ হতে চলেছে আজ। মেয়র পদে আট প্রার্থী, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৩ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৭৮ জন অর্থাৎ মোট ৩২৯ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইসির তথ্যানুযায়ী, ভোটের জন্য ৪৮০টি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া প্রতিটি কেন্দ্র সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণের জন্য ৪৮০ জন প্রিজাইডিং অফিসার, তিন হাজার ৪৯৭ জন সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার এবং ছয় হাজার ৯৯৪ জন পোলিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচন সহায়ক রয়েছেন ১০ হাজার ৯৭১ জন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন বাহিনী ১৩ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। প্রায় ৩৩০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ৩০ লক্ষাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মোট ভোটারের সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন, মহিলা ভোটার পাঁচ লাখ ৮৬ হা