সালাহ উদ্দিন সৈকত(গাজীপুর প্রতিনিধি)
গাজীপুর মহানগর এলাকার যানজট এড়াতে সিটি মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমের উদ্যোগে ঈদের আগেই চালু হতে যাচ্ছে সুকুন্দি-টঙ্গী বিকল্প সড়ক। বহু বাধা-চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে রাত-দিন কর্মযজ্ঞ চালিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটির কাজ এগিয়ে নিয়ে গেছেন মেয়র।
মহানগরীর সুকুন্দিরবাগ ব্রিজ থেকে বনমালা রেলগেট হয়ে টঙ্গী পর্যন্ত এ সড়কটি চালু হলে এই এলাকার লোকজনের দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান হবে। ঈদুল আজহায় ঢাকা-ময়মনসিংহ এবং ঢাকা-সিলেট রুটের যানজট এড়িয়ে লোকজন নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন। এই সড়কটির কাজ শেষ করতে সিটি মেয়র রাত-দিন সময় দিচ্ছেন। প্রতিদিন নিজে উপস্থিত থেকে স্থানীয়দের নিয়ে সড়কের কাজ তদারকি করছেন। শুরুর দিকে কাজে গতি আনতে মেয়র নিজে অ্যাসকেভর-ভেক্যু চালিয়ে নজির সৃষ্টি করেছেন।
বিআরটি প্রকল্পে নির্মাণাধীন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিকল্প হিসেবে গাজীপুর শহর থেকে ধীরাশ্রম-বনমালা-টঙ্গী হয়ে রাজধানী ঢাকা যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটির নির্মাণকাজ বর্তমানে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। সম্পূর্ণ বিলের ওপর দিয়ে ২০-২৫ ফুট উঁচু ও ৬০ ফিট প্রশস্ত এ সড়কটির কাজ শুরু হয় মাত্র দুই-আড়াই মাস আগে। বৃহস্পতিবার বিকালে এ সড়কটির ব্রিক্স সলিংয়ের কাজ উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম। এ সময় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ এলাকার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী-বিমানবন্দর অংশের বাস রেপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজের দীর্ঘসূত্রতার কারণে মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এ দুর্ভোগ থেকে নগরবাসীসহ সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘব করতেই গাজীপুর শহর থেকে টঙ্গী বনমালা রেলগেট পর্যন্ত বিকল্প রাস্তা বের করার উদ্যোগ নেন মেয়র জাহাঙ্গীর। নগরবাসীর বহু প্রত্যাশিত বিকল্প সড়কটির নির্মাণকাজ সময়সীমার আগেই সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু এরই মধ্যে ঢাকা-জয়দেবপুর রেলওয়ের ডাবল লাইন সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। সে কারণে বিকল্প সড়কটির টঙ্গীর বনমালা থেকে সুকুন্দিরবাগ ব্রিজ পর্যন্ত এক কিলোমিটার অংশ বন্ধ করে দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ফলে বিকল্প ওই সড়কটি বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিনের এই জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েন এ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ।
ইতোমধ্যে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিকল্প সড়কের ওই অংশে ডাবল লাইনের পাশে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করে। এতে বিকল্প সড়কটির ওই অংশ একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় মেয়র জাহাঙ্গীর আলম আড়াই মাস আগে রাস্তার পাশের জমি ও বাড়িঘরের মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে রাস্তাটি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। জমির মালিকরাও স্বেচ্ছায় রাস্তার জন্য জায়গা থেকে অর্থাৎ ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও কবরস্থান ছেড়ে দিতে সম্মত হন।
পরে মেয়রের নির্দেশনায় সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ সড়কের এক কিলোমিটার অংশের ২০-২৫ ফুট নিচু এলাকা মাটি ও বালি ফেলে ভরাট করে এবং শতাধিক ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও অন্যান্য স্থাপনা বুলডোজারের সাহায্যে অপসারণ করা হয়। এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তিনটি কবরস্থানের ৩৯টি কবর পার্শ্ববর্তী ১০ কাঠা জমি কিনে নতুন কবরস্থান নির্মাণ করে ওই কবরগুলো স্থানান্তরের ব্যবস্থা করেন মেয়র। এ ছাড়া ৩৩ হাজার বোল্ডের বৈদ্যুতিক খুঁটি সরিয়ে নতুনভাবে স্থাপন করা হয়।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সফিউদ্দিন সফি জানান, বিকল্প এ সড়কটি চালু হলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচলের চাপ যেমন কমবে, তেমনি টঙ্গী থেকে গাজীপুর শহরে স্বল্প সময়ের মধ্যে আসা-যাওয়া সম্ভব হবে।
৩৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহীনুল আলম মৃধা এ বিষয়ে বলেন, এই সড়কটি চালু হলে হায়দরাবাদ-বনমালাসহ এ এলাকার জনগণের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের অবসান হবে। মেয়র মহোদয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ও তার সার্বক্ষণিক তদারকিতে রাত-দিন রাস্তার কাজ চলছে। এই অঞ্চলের যানজট এড়ানোর ক্ষেত্রে বিকল্প সড়কটি যোগাযোগের ক্ষেত্রে মাইলফলক হবে বলে আমার বিশ্বাস। জনগরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে অসীম সাহসিকতা ও ধৈর্য নিয়ে করে দেওয়ায় আমি ৩৯ ওয়ার্ডের জনগণের পক্ষ থেকে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা নগরবাসীর উন্নয়ন ও কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এ সড়কটি গাজীপুরের একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগমাধ্যম। দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। আশা করছি আসন্ন ঈদুল আজহার আগেই বিকল্প এ সড়কটি চালু করতে পারব। এটি যানবাহন চলাচলের উপযোগী হলে নগরবাসীর দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নপূরণ হবে। এই অঞ্চলের মানুষের কষ্ট লাঘব হবে। সেই সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আসবে।