সালাহ উদ্দিন সৈকত(গাজীপুর প্রতিনিধি)
তিন দিন পূর্বে শ্রমিক বিক্ষোভের মূখে ৩ ঘন্টা অবরুদ্ধ থেকে মুক্তি পাবার ৩ দিনের মাথায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও তার অনুসারীদের নামে ৫ লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলা করা হয়েছে।পুলিশ এ মামলায় ইতিমধ্যে একজনকে গ্রেফতার করেছে।
বুধবার বিকালে গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) কাশিমপুর থানায় মামলাটি দায়ের করেন কেইসি কারখানার ব্যবস্থাপক মোঃ ইমতিয়াজ।
কাশিমপুর থানা অফিসার ইনচার্জ মাহবুবে খোদা জানান,”মামলায় জিসিসি‘র ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মন্তাজ উদ্দিন মন্ডল,২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হালিম,সাধারণ সম্পাদক মোঃ শহিদুল্লাহ খান,আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল গনি,আবুল কাশেমসহ মোট ২৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।মামলার দায়েরের পর অভিযুক্ত আসামি আছিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর মেট্রো থানাধীন জিরানি বাজারের তেতুইবাড়ী এলাকার কেইসি কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ ফারুক আহমেদ জানান,”কাউন্সিলরের নেতৃত্বে ওইসব ব্যক্তিরা দুই বছর যাবৎ বিভিন্নভাবে চাঁদা দাবি করে আসছিলো।বিষয়টি সামাজিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করলেও কাউন্সিলর ও তার লোকজন নিয়মিত হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছিল।সর্বশেষ গত কয়েকদিন আগে ঈদ উপলক্ষে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে কাউন্সিলর ও তার লোকজন।টাকা দিতে অস্বীকার করায় একপর্যায়ে কারখানায় শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের মারধর করে।চাঁদা না দিলে কারখানার আরও বড় ধরনের ক্ষতি সাধনের হুমকি প্রদান করে।মারধরের প্রতিবাদে কারখানার শ্রমিকরা গত ৩ ও ৪ মে ঢাকা ইপিজেড সড়ক অবরোধ করে।তিনি কারখানা ও তার শ্রমিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে মামলা রুজু করেছেন।”
অভিযুক্ত স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মন্তাজ উদ্দিন মন্ডল চাঁদা দাবির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।তিনি বলেছেন,”রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যই ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই মামলা করা হয়েছে।”
উল্লেখ্য,গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর মেট্রো থানাধীন জিরানি বাজারের তেতুইবাড়ী এলাকার জিসিসি‘র স্থানীয় ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোন্তাজ উদ্দিন মন্ডল ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ খানসহ তার ৩০/৩৫ জন অনুসারী নিয়ে গেল রবিবার বিকালে কেএসি ফ্যাশন নামক তৈরী পোশাক কারখানার ভিতরে প্রবেশ করতে চান।এসময় কারখানার নিরাপত্তা কর্মীরা তাদের বাঁধা দেয়।পরে তারা জোর করে কারখানায় প্রবেশ করে নিরাপত্তা কর্মীদের মারধর করে।এসময় উভয়পক্ষে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার পরে কারখানায় ভিতরে খবর ছড়িয়ে পড়ে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা কারখানায় হামলা চালিয়ে নিরাপত্তা কর্মীসহ শ্রমিক-কর্মচারীদের মারধর করছে।এ খবর ছড়িয়ে পড়লে কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে বহিরাগতদের ধাওয়া করে।এসময় শ্রমিকদের ধাওয়া খেয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর মোন্তাজ উদ্দিন মন্ডল ও শহিদুল্লাহ খানসহ কয়েকজন বাঁচাতে কারখানার একটি কক্ষে লুকিয়ে থাকেন এবং অন্য সঙ্গীরা পালিয়ে যায়।
এসময় শ্রমিকরা কারখানার সামনে টঙ্গী-চন্দ্রা মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে বিক্ষোভ করে এবং বহিরাগতদের ব্যবহৃত দুইটি মোটর সাইকেল ভাংচুর করে।খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আশ্বাস দিলে আধাঘন্টা পর সড়কের উপর থেকে অবরোধকারী শ্রমিকরা অবরোধ প্রত্যাহার করে।
পরে পুলিশের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি শান্ত হলে লুকিয়ে থাকা কাউন্সিলর বেরিয়ে আসেন।পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় কারখানার মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে অবরুদ্ধ কাউন্সিলর ও তার লোকজনের আলোচনা হয়।এসময় তাদের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রায় ৩ ঘন্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কাউন্সিলর তার অপর সঙ্গীদের নিয়ে কারখানা ত্যাগ করেন।
গেল রবিবারের ঘটনার পর জিএমপি’র কাশিমপুর থানার অফিসার ইনজার্জ মাহবুবে খোদা সাংবাদিকদের বলেছিলেন,পারস্পরিক ভুলবুঝাবুঝির কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে।উত্তেজিত শ্রমিকদের হাত থেকে রক্ষা করতে স্থানীয় কাউন্সিলর ও তার দুই সঙ্গীকে কারখানার ভিতরে একটি কক্ষে লুকিয়ে রাখা হয়।পরে ভুলবুঝাবুঝির অবসান হলে তারা নিরাপদে চলে যান।