মোঃ সিরাজুল মনির চট্টগ্রাম ব্যুরো।
সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার পাঁচ বছরের মাথায় এসে মিতুর পিতার দায়ের করা মামলায় এখন প্রধান আসামি বাবুল আক্তার নিজেই। এই মামলায় তার সহযোগী আছে আরও সাতজন। সাতজনের একজন কামরুল ইসলাম শিকদার প্রকাশ মুসা শুরু থেকেই রয়েছে আড়ালে। আরেক আসামি খায়রুল ইসলাম কালুরও কোনো হদিশ পায়নি পুলিশ কিংবা পিবিআই।
মুসার পরিবারের দাবি, ২০১৬ সালে মিতু হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন পর পুলিশ মুসাকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু পুলিশ তা অস্বীকার করছে শুরু থেকে। কারাগারে থাকা ওয়াসিম আর আনোয়ারের আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিতে উঠে এসেছিল মুসার নির্দেশেই তারা হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়।
ওয়াসিম ও আনোয়ারের পাশাপাশি আরও দুই আসামি সাইফুল ইসলাম শিকদার এবং শাহজাহান মিয়া আছে চট্টগ্রাম কারাগারে। সাইফুল ইসলাম শিকদার লাপাত্তা থাকা মুসার আপন ভাই। মিতুর পিতা হত্যা মামলা দায়ের করলে রাঙ্গুনিয়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। অপর আসামি শাহজাহান মিয়াও আগে থেকেই কারাগারে ছিল। ২০ মে মহানগর হাকিম সারোয়ার জাহানের আদালত শাহজাহান মিয়াকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন। এর আগে ওয়াসিম ও আনোয়ারকে পিবিআইয়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন।
এদিকে মিতু হত্যাকাণ্ডের ২৩ দিনের মাথায় মনির নামে এক সহযোগীসহ এহতেশামুল হক ভোলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সে সময় পুলিশ জানিয়েছিল, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র সরবরাহ করেছিল ভোলা। ভোলার বিরুদ্ধে মিতু হত্যা ছাড়াও ডবলমুরিংয়ে ট্রাকচালক হত্যা, পাঁচলাইশে নার্সিং কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অঞ্জলী রাণী দেবী হত্যাসহ দুই ডজনের কাছাকাছি মামলা রয়েছে। সব মামলায় জামিন নিয়ে করোনার মধ্যে কারাগার থেকে বের হয় ভোলা। এরপর থেকে ভোলাও উধাও।
সবমিলিয়ে মিতুর পিতা সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশারফ হোসেনের দায়ের করা মামলার আট আসামির মধ্যে দুইজন শুরু থেকেই লাপাত্তা। জামিনে গিয়ে উধাও একজন। অপর পাঁচ আসামি আছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে।
মুসা ছিল বাবুল আক্তারের সোর্স। ২০১৬ সালে বাবুল আক্তারকে হত্যাকাণ্ডের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখানো হলে তিনি মুসাকে শনাক্ত করতে পারেননি। ২০২১ সালে এসে তিনি মুসাকে শনাক্ত করতে পেরেছেন বলে জানায় পিবিআই। মুসাকে কেন্দ্র করে এতদিন সব আলোচনা ঘুরপাক খেলেও হঠাৎ আলোচনায় আসে ভারতীয় নাগরিক গায়ত্রী অমর সিংয়ের সাথে বাবুলের বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে মিতু তার ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় জিইসি মোড়ে তাকে কুপিয়ে ও গুলি করে খুন করা হয়। মিতু হত্যার ৫ বছরের মাথায় গত ১২ মে তার পিতা মোশারফ হোসেন নগরীর পাঁচলাইশ থানায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারসহ আটজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওইদিনই মামলার তদন্তভার নেয় পিবিআই।
পিবিআই ১২ মে বাবুল আক্তারকে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ১৭ মে আদালতে হাজির করে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি গ্রহণের জন্য। কিন্তু বাবুল আক্তার আদালতে জবানবন্দি না দেওয়ায় আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। অপর এক আদেশে আদালত বাবুল আক্তারকে ডিভিশন সুবিধা দিতে কারা কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেন।
তবে আইনজীবীরা প্রশ্ন তুলছেন, মিতু হত্যার পর বাবুল আক্তারের বাদি হয়ে দায়ের করা মামলার নিষ্পত্তি না করে একই ঘটনায় আরেকটি মামলা পরিচালনা নিয়ে। আইনজীবীদের যুক্তি, আগের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে এখনো শুনানি হয়নি। নিম্ন আদালতে শুনানির পর যে কোনো পক্ষ চাইলে উচ্চ আদালতেও যেতে পারে।
এজাহারভুক্ত আট আসামির পাঁচজন কারাগারে থাকলেও শুরু থেকে আলোচনায় থাকা কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা ও খায়রুল ইসলাম কালুর বিষয়ে নতুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কি ভূমিকা- সেটাও এখন দেখার বিষয়। উধাওয়ের তালিকায় নতুন করে যুক্ত হলো এহতেশামুল হক ভোলা।