মোঃ সিরাজুল মনির চট্টগ্রাম ব্যুরো।
চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরে চলমান মেগা প্রকল্পের উন্নয়ন প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) ৬ হাজার ৫১৬ কাঠা ভূমি অধিগ্রহণ অন্তর্ভুক্ত আছে। অথচ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের ৪৫ মাস পূর্ণ হলেও ভূমি অধিগ্রহণ শুরু হয়নি। এতে নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কারণ, প্রকল্পের সিংহভাগ কাজ ভূমি অধিগ্রহণের উপর নির্ভরশীল। বর্তমানে ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে না এমন অংশে প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। তবে তা শেষ পর্যায়ে। এ অবস্থায় দ্রুত ভূমি অধিগ্রহণ না হলে মাঝপথে প্রকল্পের বাকি কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এছাড়া চলতি অর্থবছরে ৭৩২ কোটি বরাদ্দ থাকলেও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে মাত্র ৩০৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে সিডিএ। কাঙ্ক্ষিত বরাদ্দ না পাওয়ায় চলমান কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিতে পারছে না সংস্থাটি।
ভূমি অধিগ্রহণ কেন জরুরি : প্রকল্পের প্রধান কাজগুলো ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়া বাস্তবায়ন সম্পূর্ণ করা যাবে না। যেমন ৩৬ খালের পাড়ে রিটেইনিং ওয়াল ও রাস্তা নির্মাণ, বালি আটকাতে সিল্ট ট্র্যাপ নির্মাণ, স্টর্ম ওয়াটার রিজার্ভার বা বন্যার পানি সংরক্ষণ জলাধার নির্মাণ উল্লেখযোগ্য।
তাই প্রকল্পে ৬ হাজার ৫১৬ কাঠা ভূমি অধিগ্রহণে ১ হাজার ৭২৭ কোটি ৮৮ লাখ ৩১ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর বাইরে স্থাপনার ক্ষতিপূরণ হিসেবে আরো ১৭ কোটি ১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হিজরা খালের দুই দশমিক সাত কিলোমিটার অংশে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করার কথা। বিপরীতে মাত্র ৩০০ মিটার অংশে নির্মাণ করা হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ না করায় বাকি অংশে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। একইভাবে মির্জা খালের দুই দশমিক ৭৭ কিলোমিটার অংশে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করার কথা। বিপরীতে মাত্র ৩৬০ মিটার অংশে করা হয়েছে। বাকি অংশে ভূমি অধিগ্রহণ না করায় আটকে আছে।
শুধু হিজরা বা মির্জা খাল নয়, মেগা প্রকল্পভুক্ত ৩৬টি খালকে ঘিরেই এ জটিলতা তৈরি হয়েছে। ডিপিপি অনুযায়ী, ৩৬টি খালের দুই পাড়ে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা হবে, যার দৈর্ঘ্য ১৭৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৭০ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে।
ডিপিপি অনুযায়ী, প্রকল্পের আওতায় খালের পাড়ে ৮৫ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ কাজ চলছে, যেখানে ভূমি অধিগ্রহণ করতে হচ্ছে না। বাকি ৭২ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে।
ডিপিপি অনুযায়ী, পাহাড়ের পলিমাটি ও বালি ধারণের জন্য ৪২টি সিল্ট ট্র্যাপ নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ১৫টি করতে ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে না। বাকি ২৭টি সিল্ট ট্র্যাপ নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে।
ডিপিপি অনুযায়ী, পানি ধারণের জন্য তিনটি স্টর্ম ওয়াটার রিজার্ভার বা জলাধার নির্মাণ করা হবে, যেগুলো বন্যা নিয়ন্ত্রণে কাজে আসবে। প্রাথমিকভাবে হালিশহর, চান্দগাঁও এবং মোহরা এলাকায় জলাধারগুলো নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে সেনাবাহিনী। তবে ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় একটিরও নির্মাণ কাজ শুরু করা যায়নি।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) গৃহীত ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক মেগা প্রকল্পটি ৫ হাজার ৬শ ১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকায় ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট একনেকে অনুমোদন পেয়েছিল। ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সিডিএর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছিল। পরবর্তীতে নানা প্রক্রিয়া শেষে একই বছরের ২৮ এপ্রিল নগরীর চশমা খাল ছাড়াও মুরাদপুর এলাকার সুন্নিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন খাল ও বহদ্দারহাট মোড়ের বড় নালা পরিষ্কার করার মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য : প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী বলেন, প্রকল্পের ভৌত কাজের যেগুলো আমাদের করতে হবে তার ৫০ শতাংশ শেষ করেছি। এ অবস্থায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। তা হচ্ছে বাজেট স্বল্পতা এবং ভূমি অধিগ্রহণ। যেখানে ভূমি অধিগ্রহণ দরকার হচ্ছে না সেখানে আমরা কাজ করছি এবং সেটা শেষ পর্যায়ে। বাকি কাজ ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়া সম্ভব হবে না। যদি ভূমি অধিগ্রহণ না করে তাহলে আমাদের কাজ ফেলে বসে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, সবগুলো কাজের ডিজাইন আমরা শেষ করেছি। কোথায় কোথায় ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে সেটা সিডিএকে জানিয়েছি। ভূমি অধিগ্রহণ তাদের কাজ। জামালখান খাল, বদরখালী খাল, ত্রিপুরা খাল, ডোম খাল, হিজরা খাল, মির্র্জা খাল, বাকলিয়া খাল, বামনশাহী খাল, চাক্তাই খাল এবং গয়না ছড়া খালের বড় অংশে ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে। তা না হলে সেখানে কোথাও রিটেইনিং ওয়াল এবং কোথাও রাস্তা নির্মাণ করা যাবে না। ২৭টি সিল্ট ট্র্যাপ ও তিনটি স্টর্ম ওয়াটার রিজার্ভারের নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারছি না।
এ বিষয়ে উপ-প্রকল্প পরিচালক সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী কাদের নেওয়াজ বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ দুইভাবে করতে হবে। কিছু অংশ আমরা নিজেরা করতে পারব এবং কিছু জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে করতে হবে। আমরা যা করব তার ফাইল প্রক্রিয়াধীন। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে যে অংশ করা হবে তার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পেয়েছি। বাকি প্রক্রিয়া শুরু করব।
সেনাবাহিনীকে অর্থ প্রদান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে যা পাচ্ছি তা আমরা সেনাবাহিনীকে পরিশোধ করে দিচ্ছি। তবে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য যা দরকার তা জমা রাখা হচ্ছে।