সালাহ উদ্দিন সৈকত(গাজীপুর প্রতিনিধি)
ঈদ যাত্রায় যেমন আনন্দ তেমনি ভোগান্তিও রয়েছে যানযট ও অতিরিক্ত ভাড়ার। অন্যান্য ঈদের মতোই ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় আজ ভোর থেকেই ছিল ব্যাপক যানবাহনের চাপ। যানবাহনের চাপের কারণে চন্দ্রা-নবীনগর সড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় থেকে কবিরপুর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় দীর্ঘ যানজট দেখা গেছে। এই যানজট ছিল উত্তরবঙ্গে যাওয়ার দিকে।
তিন সন্তানের জনক জালাল(৪০)।গাজীপুরের বিশ্বাস পাড়া মহল্লায় করেন কাঁচা তরিতরকারির ব্যবসা। যাবেন রাজশাহীর সদর এলাকায় তার নিজ বাড়িতে ঈদ উপলক্ষে। আজ শনিবার (১৭জুলাই) সকাল সাড়ে সাতটায় কথা হয় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায়।
করোনার মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে কেন বাড়ি যাচ্ছেন? জানতে চাইলে জালাল বলেন, ‘করোনা তো এক বছর হয়ে গেল। করোনা আমাদের ছাড়বো না। ছেলে–মেয়ে বাড়িত। ঈদেও যদি বাড়িতে না যাই, তাইলে কবে যাব। মরলে ছেলে মেয়ে সবারে নিয়ে মরবো।’
গাজীপুরের সফিপুর এলাকার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক মামুন উর রশীদ যাবেন রংপুরে। তিনি এটিএন টাইমস কে বলেন, ‘অনেক দিন হলো বাড়ি যাই না। সামনে ঈদ, তাই মা-বাবার সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছি। সরকার বিধি নিষেধ মেনেই যাচ্ছি, কী করব বলেন, ঈদ বলে কথা। একটু ঝুঁকি হলেও বাড়ি যাচ্ছি। ভাড়াও অনেক বেশি। বাসে টিকিট করেছি ১ হাজার ২০০ টাকা। সকাল সাতটায় বাস ছিল, কিন্তু এখনো আসেনি, কাউন্টার থেকে বললো সময় লাগবে।’
দূরপাল্লার বাস, লোকাল বাস,ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস—যে যেভাবে পারছেন ছুটে চলেছেন। কারও মধ্যেই সরকারি বিধিনিষেধ ও করোনা মহামারির ভয় যেন নেই। বাড়ি ফেরার জন্য অঘোষিত এক প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। একই সুযোগে সকল পরিবহনের মালিক ও চালকেরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে নিচ্ছেন।
চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘরমুখী মানুষের চাপ বাড়তে থাকে। পর্যাপ্ত গণপরিবহন জাতীয় যানবাহন থাকা সত্ত্বেও ভাড়া বেশি হওয়ার কারনে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পিকআপ ও ট্রাকে উঠে পড়েন। তবে বেশির ভাগ মানুষ গণপরিবহনে করে রওনা হন। অনেকে পরিবার–পরিজন নিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল করে বাড়ি ফিরছেন।
একসময় চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় এসে গাড়ির জটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকা যাত্রীদের কাছে এটি পরিচিত হয়ে উঠেছিল। উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার এটি। কোনো ঈদে ঘরমুখী মানুষ চন্দ্রা ত্রিমোড়ে যানজটে আটকা পড়ে নাজেহাল হননি, এমন ঘটনা প্রায় বিরল। শুধু ঈদের সময় নয়, বছরের প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনো সময় এ মোড়ে জট লেগে থাকত। এবারও সেই চিত্র লক্ষনীয়। তবে আজ ভোর থেকে আছে মানুষের জট। এখানে থাকা বেশির ভাগ মানুষই খেটে খাওয়া শ্রমিক। এ ছাড়া আছে যাঁদের কোনো কাজ নেই।
চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় কথা হয় একতা পরিবহনের চালক খায়রুল ইসলাম এর সঙ্গে। তিনি বলেন, যাত্রী নিয়ে তাঁরা বগুড়া পর্যন্ত যাচ্ছেন। এর বেশি যাচ্ছেন না। বগুড়া পর্যন্ত বাসে ৮০০ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছেন।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা সোহান বলেন, তিনি সাভার থেকে চন্দ্রায় এসেছেন বাসে করে। এখান থেকে গাইবান্ধা যাবেন। কীভাবে যাবেন? গাড়ির টিকিট করেছেন?—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো টিকিট করিনি, এখন করবো,না পেলে অন্য ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
অটোরিকশা চালক মাহবুব বলেন,গাড়ির টিকিট পাইনি,তাই ট্রাকে উঠে চলে যাব।’ কিছুক্ষণ পর তিনি দৌড়ে একটি ট্রাকে উঠে পড়েন। তাঁর মতো আরও ১০ থেকে ১২ জন ঘরমুখী মানুষ দৌড়ে ওই ট্রাকে উঠে যান।
সালনা হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জনাব গোলাম মোহাম্মদ ফারুক বলেন, মহাসড়কে যানবাহন প্রচুর। আজ বিকেল থেকে আরও চাপ বাড়ার আশঙ্কা আছে। এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা পুলিশ এর ব্যাপক প্রস্তুতি আছে। মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে প্রায় সাতশ জন পুলিশ সদস্য কাজ করছেন।