মোঃ সিরাজুল মনির ব্যুরো প্রধান চট্টগ্রাম।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কোটি টাকার মশক নিধন অভিযানের তেমন কোন সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী। মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ চট্টগ্রাম মহানগরীতে বসবাসকারীরা। তার ওপর বেড়েছে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। নগরের প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে ময়লার স্তূপ আর নালার ময়লা পানি থেকে দিন দিন বাড়তে শুরু করেছে মশার যন্ত্রণা। তবে আশার কথা হলো, মশার উপদ্রব কমাতে সক্রিয় হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। যদিও ইতোমধ্যে স্প্রে ছিটানোর কাজ শুরু করেছে চসিক।
চসিকের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী জানান, মশা নিধন কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু করা হয়েছে। নগরীর ওয়ার্ডগুলোকে চারভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে চারজন করে পরিচ্ছন্ন কর্মী কাজ করবে। আজ থেকে পুরোদমে মশা নিধন কার্যক্রম শুরু হবে। আমাদের পর্যাপ্ত জনবল, মশার ওষুধ, মেশিন আছে।
তিনি আরো বলেন, প্রত্যেকে যদি নিজ নিজ বাসার আঙ্গিনা পরিষ্কার রাখেন তা হলে মশার প্রাদুর্ভাব কমে যাবে। এছাড়াও নিয়মিত সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কারের পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহে ট্যাংকে কালো তেল বা কেরোসিন ছিটানো, নালা-নর্দমা পরিষ্কার রাখলে মশা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে এবং প্রজননও কমে যাবে।
পরিচ্ছন্ন বিভাগ সূত্র জানায়, মশা নিধনের কাজ শুরু করার লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। চসিকে স্প্রে ম্যান রয়েছেন ২শ জন। হ্যান্ড স্প্রে মেশিন রয়েছে একটি ও ফগার মেশিন ৮০টি। এছাড়াও মঙ্গলবার আনা হয়েছে ১৫ হাজার লিটার কালো তেল, যা আজ থেকে ছিটানো হবে।
বর্ষা মৌসুমের পরপরই সাধারণত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মশার প্রকোপ বাড়ে। এসময় এসব স্থানে তরল অ্যাডালটিসায়েড ওষুধ ছিটালে মশার বংশবৃদ্ধি রোধ হয়। এ ছাড়া উড়ন্ত মশা মারার জন্য লার্ভিসায়েড নামে আরও এক ধরনের ওষুধ ব্যবহার করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
সরেজমিন নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শীত মৌসুমে নগরীর নালা-নর্দমার পানির ধারা স্থির রয়েছে। যার কারণে অন্য সময়ের তুলনায় মশার প্রজনন হারও বেড়েছে। অন্যদিকে অধিকাংশ নালা-নর্দমা ও সড়কের আশপাশ এবং ডাস্টবিনসহ বিভিন্ন স্থানে ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার দৃশ্যও দেখা গেছে। এসব স্থান থেকেই মশার উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে অভিযোগ নগরবাসীর।তারা বলছেন, মশা নিধনে চসিকের প্রকৃত কোনো উদ্যোগ নেই, যার কারণে দিনের বেলায়ও মশারি টাঙ্গিয়ে দিনযাপন করতে হচ্ছে। দিনের বেলায়ও মশা থেকে রেহাই মিলছে না। বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মস্থলসহ সর্বত্রই এখন মশার উৎপাত।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম সবখানে তো বাড়ছে মশার উপদ্রব। আমরা মশক নিধন কার্যক্রম শুরু করেছি। ইতোমধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। পাশাপাশি জনগণকে সচেতন হওয়া ও বাসা-বাড়ির আশপাশের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য আহবান জানাই।
চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসিন্দা একরাম বলেন অনেক আগে থেকেই মশক নিধন অভিযান শুরু হলেও এ এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের তেমন কোন তৎপরতা দেখা যায়নি। অথচ এ মশক নিধন প্রোগ্রামে সিটি কর্পোরেশন কোটি কোটি খরচ দেখায়। সন্ধ্যা হওয়ার আগে একটু হাটার জন্য বের হতাম এখন মশার কারনে আছরের নামাজ পড়ে বাসায় ঢুকে যেতে হয় বলে তিনি জানান। এ এলাকার সিডিএ পাবলিক স্কুল মাঠে বসা গৃহিণী নারগিছ আক্তার বলেন মাসখানেক আগেও এখানে এসে একটু শান্তিতে বসতাম আর এখন মশাদের উৎপাত এত বেড়েছে যে ভয়ে আসা বন্ধ করে দেব ভাবছি। তিনি বলেন মশা নিধনের নামে সিটি কর্পোরেশনে কোটি কোটি আত্মসাত করে যাচ্ছে কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না।