মো মিজানুর রহমান মনপুরা উপজেলা প্রতিনিধি
সুচিন্তিত পাঠক বৃন্দ আপনারা টিকা ওয়ালাদের অনেকেই চিনে থাকবেন। চারকোনা একটা বাক্স হাতে আর বড় একটা ব্যাগ নিয়ে কাক ডাকা সকালে গ্রাম্য পথ ধরে সাইকেল চালিয়ে বা হেঁটে যে মানুষটি টিকাদান কেন্দ্রে হাজির হয় তিনিই টিকাওয়ালা। আপনাদের হয়ত মনে পড়বে খুব ছোট বেলায় পোলিও পোলিও বলে চিকিৎসা দিতেন। সেই পোলিও ওয়ালাই আজকের টিকাওয়ালা। যাইহোক এই টিকাওয়ালারদের আরেকটি নাম আছে, বেদনাময় অভিশপ্ত নাম সেটা হলো ” স্বাস্থ্য সহকারী “। এই নামে টিকাওয়ালাদের মানুষ চিনেনা বললেই চলে। চিনবেনই বা কেমন করে, এই নাম যিনি দিয়েছেন তিনিও আমাদের চিনেন না।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ, এই টিকাওয়ালারা যে কি করতে পারে সেটা পৃথিবীর সকল গল্পকে হার মানাবে। বলে কি ব্যাটা, পাগল নাকি? এতক্ষনে আপনারা আমাকে আহম্মকের খাতায় নিয়ে নিয়েছেন।সম্মানিত পাঠক, সাথে থাকুন, শুনুন বেদনাময় জীবনে আত্ননাদ।সময়টা ৭ এপ্রিল ১৯৭৯ বাংলাদেশে ১ বছরের কম বয়সী সকল শিশুদের বহুল পরিচালিত সংক্রামক রোগ যক্ষ্মা,ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি, হাম, পোলিও-মাইটিস এবং মা ও নবজাতকের ধনুষ্টংকার পরবর্তীকালে ২০০৩ সাল থেকে হেপাটাইটিস রোগের টিকা, ২০০৯ সাল থেকে হিমোফাইলাস রোগের টিকা দেওয়া হচ্ছে। ২০১৫ সাল থেকে নিউমোনিয়ার (ফুসফুস প্রদাহ) টিকা দেওয়া হচ্ছে। ২০১৯সাল থেকে হাম রুবেলার টিকা দেয়া হচ্ছে।টিকা দেয়ার শুরুটা মসৃন ছিলো না। সমাজ ব্যবস্থা, অশিক্ষা, অজ্ঞতা, ধর্মীয় কিছু অপব্যখ্যা এই কাজটাকে অনেক বন্ধুর করেছে। কোথাও কোথাও টিকাওয়ালারা কাজ ফেলে দৌড়ে পালিয়েছে। আবার ফিরেএসেছে। মানুষের মানষিক পরিবর্তন করাটাই ছিলো চ্যলেঞ্জিং কাজ। ঝড় -ঝঞ্জা, রোদের খরতাপ মাথায় নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে মানুষকে বুঝানো ছিলো পৃথিবীর কঠিন কাজগুলোর একটি।তবুও এই টিক্কাওয়ালারা থামেনি, হার মানেনি বাস্তবতার কাছে। যার ফলস্বরূপ আজ বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে। প্রিয় পাঠক, একবার কি ভেবেছেন কি দিয়েছে এই টিকাওয়ালা স্বাস্থ্য ফেরিম্যানরাএক সময় পৃথিবীতে প্রতি সাতজন মানুষের চার জনই ছিলো গুটিবসন্তে আক্রান্ত। কোন চিকিৎসা ছিলো না। শরীরের মাংশ পচা গন্ধে সুস্থ মানুষ আক্রান্ত মানুষকে পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিল। সারা পৃথিবীতে শুধুই মৃত্যুর মিছিল। এই টিকাওয়ালারাই ছিলো সেই সময়ের ভরসার নাম। আজ আমরা সব ভুলে গেছি।কলেরায় গ্রামের পর গ্রাম মানুষ মরে উজাড় হয়ে যাচ্ছিলো, সেদিনও টিকাওয়ালাই ছিলো ভরসার নাম।ডায়রিয়া, যক্ষা, পোলিও কি দূঃর্বিসহ ছিলো মানুষের নিয়তি। সেদিনও টিকাওয়ালাই ছিলো প্রানের স্পন্দন।
এই “স্বাস্থ্য সহকারী ” নামের টিকাওয়ালারাই কিভাবে হাত ধুলে ডায়রিয়া হয় না, জন্ডিস হয়না, শিখিয়েছে। শালদুধে পুষ্টি আছে শিখিয়েছে। আজ দশটি রোগের টিকা দিয়ে আপনাকে ও আপনার সন্তান কে পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে সহায়তা করছে। গর্ভবতী মায়ের সেবা, পরামর্শ, ভিটামিন” এ” ক্যাম্পেইন, কৃমিনাশক বিতরন, মাতৃ মৃত্যু শিশু মৃত্যু কমানো,পোলিও মুক্ত বাংলাদেশ, যক্ষা নিয়ন্ত্রণ,, হাম রুবেলা নিয়ন্ত্রণ, ধনুষ্টংকার মুক্ত বাংলাদেশ, ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ, নিউমোনিয়া নিয়ন্ত্রণ, হেপাটাইটিস মুক্ত বাংলাদেশ, স্বাস্থ্য শিক্ষা কি না করেছে আপনার জন্য।দেশের জন্য। আর আমরা বেমালুম ভুলে গেছি টিকাওয়ালাদের নাম।প্রিয় পাঠক, আজ এমডিজি ৪ অর্জন, সাউথ সাউথ পুরষ্কার, দক্ষিন এশিয়ায় টিকা দানে প্রথম অর্জন, হাম রুবেলা নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতি পুরষ্কার সর্বশেষ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘ ভ্যাকসিন হিরো ‘পুরষ্কারে ভূষিত করেছে এই টিক্কাওয়ালারা।সম্মানীত পাঠকবৃন্দ, যখন বিদেশ থেকে পুরষ্কার এলো, রাজ্যের রাজাও বলে এটা আমার, আমি এনেছি, মন্ত্রী মশাই বলে এটা আমার, আমি এনেছি। উজির, নাজির সবাই যে যার মত করে টেনে হিছড়ে হয়েছে পুরষ্কারের ভাগীদারকোন দুঃখ নেই। টিকাওয়ালারাই কেবল জানে এ পুরষ্কার “রাজ্যের”।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই টিকাওয়ালারাই আপনার ভ্যাকসিন সেনা। এদের অফিসিয়াল নাম ” “স্বাস্থ্য সহকারী “। এরা আজো বেতন বৈষম্যের শিকার, এরা অবহেলিত। আপনি ছাড়া এদের কেউ নেই। টিকাওয়ালাদের ভালো বাসুন। আরো আরো পুরষ্কার এনে দিবে এরা।