নাহিদ মিয়া,হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জের মাধবপুর শহর গড়ে উঠেছে সোনাই নদীর তীরে। এক সময় সোনাই নদী দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করত স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। জেলেরা নদীতে মাছ ধরে জীবন চালাত। চাষীরা নদীর পানি দিয়ে জমি চাষ করত। নদীকে ঘিরেই নদীর পাড়ের মানুষের জীবন জীবিকা ছিল। ভারতের পশ্চিম ত্রিপুরা রাজ্যে পাহাড়ে সোনাই নদীর উৎপত্তি স্থল। দীর্ঘ ৫০ কিলোমিটার বয়ে চলেছে এই সোনাই নদী। খাস্টি নদী হয়ে মিলিত হয়েছে মেঘনা নদীতে। সেই সোনালী দিনের সোনাই নদী দখলে দূষণে এখন মরতে বসেছে। ক্রমাগত ভাবে নদী পাড়ের মানুষ ও মাধবপুর বাজারের ব্যবসায়ীরা নদীর মধ্যে বিভিন্ন ময়লা আর্বজনা ও দুষিত পদার্থ ফেলে নদীর পরিবেশ নষ্ট করে ফেলেছে। বিভিন্ন স্থানে নদী দখল করে ঘর বাড়ি ও ব্যবসা বানিজ্য গড়ে তোলায় নদী এখন খালে পরিনত হয়েছে। মাধবপুর পৌরশহরে কাটিয়ারা গ্রামের নদী পাড়ের বাসিন্দা কাউন্সিলর বিশ^জিত দাস বলেন, আমরা শৈশবে দেখেছি নদীর গভীরতা ও প্রশস্থতা অনেক ছিল। এ নদীতে সব সময় পানি থাকত। দুরের মানুষ ব্যবসা বানিজ্যের জন্য নৌযান দিয়ে মাধবপুরে মালামাল আনা নেওয়া করত। কিন্তু নদীর প্রতি মানুষের এখন আগের মতো ভালবাসা নেই। যে যেভাবে পারে নদীকে ধ্বংস করে ফেলেছে। মাধবপুর সোনাই নদী এই করুন দশা দেখলে এখন মনে খুব কষ্ট লাগে। এখন নদীপাড়ে দুর্গন্ধের কারণে যাওয়া যায় না। নদীর প্রতি মানুষের ভালবাসা ও সচেতনা সৃষ্টি না হলে এ নদী এক সময় ভরাট হয়ে মরে যাবে। মাধবপুরে গত কয়েকবছর ধরে অপরিকল্পিতভাবে শিল্প কারখানা গড়ে উঠায় শিল্প বর্জ্য নদীতে মিশে নদী নষ্ট হচ্ছে। নদীকে বাঁচাতে হলে পরিবেশ বান্ধব শিল্প স্থাপন করতে হবে। মাধবপুর সোনাই নদীতে দূষিত পদার্থ ফেলে নদী দূষণ করা হয়েছে। এখন সোনাই নদীর পাড় দিয়ে হাঁটাচলা কঠিন হয়ে পড়েছে। কাটিয়ারা সোনাই নদীর পাড়ে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু নদীতে পড়ে থাকা বিভিন্ন বর্জ্যরে গন্ধে ছাত্র ছাত্রীরা অস্বস্থিতে পরেছে। পরিবেশ বিদ আরাফাত জুবায়ের তরিৎ বলেন, মাধবপুরের অন্যতম নদী হচ্ছে সোনাই নদী। এ নদীর পানি বিভিন্ন হাওর ও নালায় পড়ে মাছের প্রজনন ও আবাস হতো। কিন্তু এখন এই সোনাই নদীতে গণহারে বিভিন্ন বর্জ্য দূষিত পদার্থের সংযোগ নদীতে দেওয়ায় এ নদীর পানি কালো হয়ে গেছে। যে কারণে এখন সোনাই নদীতে মাছ থাকার কোন পরিবেশ নেই। মাধবপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শ্রীধাম দাশগুপ্ত বলেন, নদীর জীবন্ত সত্তা রয়েছে। মানুষের যেমন অঙ্গহানি হলে মানুষ ব্যতীত হয় নদীও দূষিত হলে নদী মরে যায়। হবিগঞ্জের মধ্যে একসময় সোনাই নদী দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্যের ফলে আমাদের সু-দিন ছিল। কিন্তু নদী পাড়ে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে উঠায় এখন সোনাই নদী দখল হয়ে গেছে। সোনাই নদীতে বাজার ও গৃহস্থালির বর্জ্য ফেলায় নদীর পানি কালো হয়ে গেছে। সোনাই নদীকে রক্ষা করতে সরকারের দায়িত্বশীল লোকদের যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। মাধবপুর পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান মানিক জানান, সোনাই নদীর সু-দিন আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। সরকারের প্রতি আমাদের দাবি হচ্ছে নদীর সুরক্ষায় সরকারীভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। নদীপাড়ের স্বাভাবিক পরিবেশ যাতে আর নষ্ট না হয় সেজন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। হবিগঞ্জ বাপার সভাপতি অধ্যাপক (অবঃ) ইকরামুল ওয়াদুদ জানান, সোনাই নদীর বিষয়টি নিয়ে শীঘ্রই বাপা’র সেক্রেটারীর সঙ্গে কথা বলে আমাদের করণীয় নির্ধারণ করবো। মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মন্জুর আহ্সান বলেন, সোনাই নদীর অতীত ঐতিহ্য ও গৌরব ফিরিয়ে আনতে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।