দৌলতখান প্রতিনিধি:
দৌলতখানের সদ্য প্রতিষ্ঠিত একটি বেসরকারি কলেজের অফিস সহকারী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। একটি বিদেশি সংস্থার পক্ষ থেকে গভীর নলকূপ, উন্নতজাতের গাভি, পাকাঘর ও মসজিদ নির্মাণ করে দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে উপজেলার সহস্রাধিক মানুষের কাছ থেকে এ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। ওই দুই প্রতারক হলেন চরখলিফা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের রুহুল আমিনের ছেলে শহিদ ও তার স্ত্রী আঁখি আক্তার। টাকা ফেরত পেতে পাওনাদাররা কয়েক দিন ধরে বাড়িতে এসে উপর্যুপরি চাপপ্রয়োগ করতে থাকলে বাড়িতে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে ফেলে রেখে শহিদ সস্ত্রীক আত্মগোপনে চলে যান।
সোমবার সকালে সরেজমিন গেলে প্রতারণার শিকার শতাধিক ভুক্তভোগী তাৎক্ষণিক এসে হাজির হন। তারা জানান, শহিদের স্ত্রী আঁখি আক্তার কুয়েতের একটি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরি করেন বলে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। ওই সংস্থা দৌলতখানে সুপেয় পানির জন্য কয়েকশ গভীর নলকূপ, দরিদ্রদের উন্নত জাতের গাভি, পাকাঘর ও কিছু পাকা মসজিদ নির্মাণ করে দেবে বলে প্রচার চালান তারা। এসব পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহস্রাধিক মানুষের কাছ থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে উত্তোলন করেন। এতে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা দাবি করেন। আর এসব টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে চরখলিফা ইউনিয়নের চার ইউপি সদস্য ও দৌলতখান পৌরসভার এক মহিলা কাউন্সিলরকে আস্থার প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
চরখলিফা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য জাহিদ হোসেন টিটু ও ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য আজম খান বলেন, আমাদের এলাকায় ৫৭টি গভীর নলকূপ দেবে বলে ৫৭ জনের কাছ থেকে ২০ হাজার করে ১১ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ১০টি গাভি দেবে বলে ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা ও একটি মসজিদ নির্মাণ করার কথা বলে ২০ হাজার টাকা নেন শহিদের স্ত্রী আঁখি আক্তার। ওই ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের রেনু বেগম বলেন, ‘আমাকে দৈনিক ৫০০ টাকা পারিশ্রমিক দিয়ে আমার মাধ্যমে ১৭টি নলকূপ বাবদ ১৭ জনের কাছ থেকে ২০ হাজার করে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ৮০টি উন্নত জাতের গাভি দেবে বলে ৮০ জনের কাছ থেকে ১০ হাজার করে ৮ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। এছাড়া তিনজনকে তিনটি পাকাঘর দেওয়ার কথা বলে ৯০ হাজার করে দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। চরখলিফা ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা খন্দকার মাইন উদ্দিন বলেন, আমার এলাকায় ৭টি নলকূপ দেবে বলে আমার কাছ থেকে শহিদ ও আঁখি আক্তার ১ লাখ ১১ হাজার টাকা নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে চরখলিফা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মেহেদী মাসুদ মুকু খান জানান, আমার কলেজের অফিস সহকারী অভিযুক্ত শহিদ ও তার স্ত্রী আঁখি আক্তার এলাকার সহস্রাধিক মানুষের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এসব মানুষ প্রতিদিন আমার কাছে এসে অভিযোগ করছেন। প্রতারণার দায়ে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।