এইচ.এম.ফরিদুল আলম আশরাফী আন্তর্জাতিক রিপোর্টার
মাগরিবের নামাজ শেষ। আকাশে রক্তিম আভার কিঞ্চিৎ ঝলক তখনো বিদ্যমান। রিয়াদের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কাজ শেষ করে শ্রমিকেরা হারা’য় ফিরছে।
হারা,
হাজারো বৈধ অবৈধ বঙসন্তানের আশ্রয়স্থল।পৃথিবীর সবচাইতে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা যেখানে লাখো বাঙালীর আনাগোনা হাজারোর বসতি।
মোহাম্মদ সেলিম ,বাড়ী চট্টগ্রাম আনোয়ারা । ১৭ সালে পাঁচ লাখ টাকায় রিয়াদে এসেছিলো। আসার পর থেকে কফিলের দেখা তো দূরের কথা দালালকেও খুঁজে পায়নি। তাই বলেতো আর বসে থাকা যায় না।
এই শহরের লাখো অবৈধ বাঙালীর মতো সেও থেমে থাকেনি। এই হারা-ই তার আশ্রয়স্থল। দিব্যি খাচ্ছে দাচ্ছে ঘুমাচ্ছে আর কাজ করছে কখনো এখানে তো কখনো ওখানে। মাস শেষে বিকাশে কিছু কিছু টাকা পাঠাচ্ছে পরিবারের জন্য ।
তার কোন কফিল নেই, ইকামা নেই টেক্স নেই, টেনশনও নেই।
মনে একটাই প্রতিজ্ঞা আরো কয়েকটা বছর থাকতে হবে।
গাড়ী থেকে নেমে সিদা চায়ের দোকানে ঢুকে একটা শিঙারার সাথে এককাপ চা নিয়ে খাচ্ছে আর আয়েসি ভঙ্গিতে পা নাচাচ্ছে সেলিম ভাই ।
হটাৎ সাইরেন বাজিয়ে চায়ের দোকানের সামনে এসে থামলো পুলিশের গাড়ী। শতশত অবৈধ ছুটে পালালো এদিক সেদিক।
সেলিম ভাইয়ের গলা শুকিয়ে গেলো। পাঁচ লাখ এখনো উঠাতে পারেনি, দরজায় পুলিশ, হাতে শিঙারা, পকেটে নেই ইকামা। নির্ঘাত জেল খেটে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। চোখে মুখে অন্ধকার ভবিষ্যৎ।।
পুলিশ দরজার বাইরে থেকে তাকে ডাক দিল, তাল…, পুলিশের কর্কশ ডাকে হাতের শিঙারা প্লেটে রেখে মৃদু পায়ে দরজায় হাজির হলো সেলিম ভাই।
পুলিশ যা বোঝার বুঝে গিয়ে কাছে ডেকে তাকে বললো, জিব ইকামা.., সেলিম মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
এবার পুলিশ কিছুটা রাগান্বিত হয়ে বললো, জিব ইকামা সুরা…., সেলিম মৃদু স্বরে বললো, আনা মাফি ইকামা..
পুলিশ রেগে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ইকামা মাফি?? এস ফি?
স্বপ্নভঙ্গের চাহুনিতে সেলিম ভাই এদিক ওদিক তাকালো।তারপর পুলিশকে বললো, ইকামা মাফি,বাস দৌড় ফি…..
সেলিম ভাই দৌড়াচ্ছে, পুলিশও দৌড়াচ্ছে…., নিমিষেই চিপা গলিতে হারিয়ে গেলো আমাদের সেলিম ভাই ….., পুলিশ দাঁতে দাঁত চেপে গলির দিকে তাকিয়ে রইলো….. গল্পের সমাপ্তি এখানেই।