• শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩, ০৮:৩৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
কোন মায়ায় তুমি বেঁধেছো প্রেমিকেরে? মাহফুজ আলী কাদেরীর বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারীদের গ্রেপ্তারের দাবীতে পাবনায় বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ইউনিয়নের মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত লৌহজংয়ে চার প্রতিষ্ঠানকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা   লৌহজংয়ে ভূমিহীন-গৃহহীন ৪৫ পরিবারের মাঝে জমি ও গৃহ হস্তান্তর মাধবপুরে পবিত্র রমজান উপলক্ষে অসহায়দের মাঝে ইফতার”খাদ্য সামগ্রী বিতরণ লৌহজংয়ে দশ ট্রাক চায়না দুয়ারি আটক দৌলতখানে উঃ জয়নগর ইউনিয়নে জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ ফরিদগঞ্জে ৩১ পরিবার মুজিবর্ষের ঘর প্রদানের মধ্যে দিয়ে উপজেলা ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা ভোলা কাচিয়া সাহামাদার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এস.এস.সি পরীক্ষার্থীদের বিদায়ী ও দোয়া অনুষ্ঠিত লৌহজংয়ে ১৭ জেলে পরিবারের মাঝে বকনা বাছুর বিতরণ

প্রহেলা বৈশাখ কোনো হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি নয়, সার্বজনীন উৎসব। 

দৈনিক আমাদের সংগ্রাম | পত্রিকা..... / ১১৭ জন পড়েছে
প্রকাশিত সময়: বুধবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২১

প্রহেলা বৈশাখ উদযাপন করাকে যারা হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি বলে প্রচার করছেন। তারা মূলত বাংলা সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে চান। তাদের পাকিস্তানপন্থী বলাও দোষের হবে না। আর যারা অজ্ঞতার কারণে প্রহেলা বৈশাখ উদযাপন করাকে হিন্দুয়ানী সংস্কৃতির তকমা দিচ্ছেন তাদের জন্য কিছু কথা।

 

একজন সম্ভ্রান্ত মুসলিম শাসকের হাত ধরেই প্রহেলা বৈশাখ কিংবা বাংলা নববর্ষের গোড়াপত্তন হয়েছে। তিনি হলেন বাদশাহ জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ আকবর। তিনি শুধুমাত্র একজন মুসলমানই ছিলেন না বরং সারা মুসলিম বিশ্বে একজন বিখ্যাত , উদার মনের শাসক ছিলেন। একজন মুসলিম শাসকের বাংলা সংস্কৃতিকে দিয়ে যাওয়া এমন সুন্দর,শুভ ও মঙ্গলময় সৃষ্টিকে এক শ্রেণির পাক এজেন্ডারা হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি বলে প্রচার করে এদেশের সাধারণ মুসলমানদের কাছে বাংলা এ সংস্কৃতিকে বিষিয়ে তুলছে চাইছে।

 

তারা হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা করে বাংলা এ সংস্কৃতিকে বাঙ্গালি মুসলমানদের মন থেকে মুছে দিতে চায়।

একজন মুসলিম ভাই দেখলাম প্রহেলা বৈশাখ নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, ” পহেলা বৈশাখ উদযাপনকে অসাম্প্রদায়িকতার দোহাই দিয়ে “ধর্ম যার যার,উৎসব সবার ” বলা হচ্ছে । অথচ পহেলা বৈশাখে হিন্দু, বৌদ্ধ,মজুসীদের পূজার দিন বৈ কিছুই নয় । একজন মুসলমান কখনো ‘পহেলা বৈশাখ ‘ নামের পূজা পালন করতে পারেনা । যে মুসলমান সে কখনোই বৈশাখী অনুষ্ঠানে যেতে পারেনা । যে যায় সে কিছুতেই মুসলমান থাকতে পারেনা”

 

এই যে মুসলিম ভাইটি প্রহেলা বৈশাখ নিয়ে এত সুন্দর হাদিস ব্যাখ্যা করলেন। তিনি সেই হাদিসের নাম ও সংখ্যা লিখে যেতে পারেন নি। যাইহোক তার মতে, বাদশাহ আকবর সহ যে সকল মুসলিম পন্ডিতগণ প্রহেলা বৈশাখকে যারা স্বীকৃতি দিয়েছেন। তারা কেউ মুসলমান হতে পারেন না। ব্যাপারটা সত্যিই অবাককর,এমনকি হাস্যকরও বটে।

 

বৈশাখ নিয়ে কাঠমোল্লাদের মাত্র একটা উদাহরণ তুলে ধরলাম। কাঠমোল্লারা হাদিসকে বিকৃত করে এ রকম হাজারো ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট, তারা পাক সরকারের বাংলা সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার অসমাপ্ত কাজটুকু করতে চায়। ১৩৭০ বঙ্গাব্দে প্রহেলা বৈশাখে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের সংগীত বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ছায়ানটের কার্যক্রমের শুরুর দিকে পাকিস্তান শাসন গোষ্ঠী বাংলা সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্য রবীন্দ্র সংগীতের বিরোধিতা শুরু করে। তখন ছায়ানট সংগীত বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিল্পীরা সচেতন হয়ে তা বুঝতে পেরে পাকষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে শৈল্পিক প্রতিবাদ হিসেবে ছায়ানটের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর দিন তথা ১৩৭৪ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখ (১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ) রমনার বটমূলে বর্ষবরণ উৎসব করে।

তারপর থেকেই এ অনুষ্ঠান বিপুল জনসমর্থন লাভ করে এবং স্বাধীকার আন্দোলনের চেতনায় পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর নীতির বিরুদ্ধে ও বাঙালি সংস্কৃতি আদর্শের লালনে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় বাংলা নববর্ষ পালিত হতে থাকে।যারা ধারাবাহিতায় সারা বিশ্বে বাঙ্গালিরা এ দিনটিকে পালন করে। আমাদের দেশসহ সারা বিশ্বে যেখানেই বাঙ্গালি আছে। সেখানেই এই উৎসবটি শোভাযাত্রা, মেলা, পান্তাভাত খাওয়া, হালখাতা খোলা ইত্যাদি বিভিন্ন কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হয়।

 

নববর্ষের সময় বাংলাদেশে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। ২০১৬ সালে, ইউনেস্কো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত এই উৎসব শোভাযাত্রাকে “মানবতার অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য” হিসেবে ঘোষণা করে। ইউনেস্কো কর্তৃক প্রাপ্ত এ স্বীকৃতি গোটা বাংলা সংস্কৃতিকে গোটা বিশ্বে এক মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়েছে। যা সত্যিই আমাদের গর্বের বিষয়।

 

যারা প্রহেলা বৈশাখ উদযাপন করাকে হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি বলে দাবি করেন। তারা চায় না এ দেশে বাংলা সংস্কৃতি চর্চা হোক। তারা পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে পাক সংস্কৃতিপন্থী। তাদের সংশোধন কিংবা রুখে দিতে না পারলে তারা বাংলা সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দিবে। এবার সময় এসেছে বাংলা সংস্কৃতির বিরুদ্ধে অপপ্রচার করাকে অসভ্য ও পাক জানোয়ারদের শক্তহাতে প্রতিহত করার। সরকারসহ যারা বাংলাদেশকে ভালোবাসেন,বাংলা সংস্কৃতিকে ভালোবাসেন তারা এই পাক সংস্কৃতি চর্চাকারীদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলন।

 

প্রহেলা বৈশাখ সম্পর্কে ইতিহাস থেকে জানা যায় যে,

“যার হাত দিয়ে বৈশাখ কিংবা বাংলা নববর্ষের গোড়াপত্তন হয়েছে তিনি কেবল মুসলমানই ছিলেন না বরং সারা মুসলিম বিশ্বে একজন নামকরা, উদারপন্থি শাসক হিসেবে আজও পরিচিত তিনি হচ্ছেন সেই জালালুদ্দিন মুহাম্মদ আকবর।

 

আমাদের দেশে প্রচলিত বঙ্গাব্দ বা বাংলা সন মূলত ইসলামী হিজরী সনেরই একটি রূপ। ভারতে ইসলামী শাসনামলে হিজরী পঞ্জিকা অনুসারেই সকল কাজকর্ম পরিচালিত হতো। মূল হিজরী পঞ্জিকা চান্দ্র মাসের উপর নির্ভরশীল। চান্দ্র বসর সৌর বসরর চেয়ে ১১/১২ দিন কম হয়। কারণ সৌর বসর ৩৬৫ দিন, আর চান্দ্র বসর ৩৫৪ দিন। একারণে চান্দ্র বৎসরে ঋতুগুলি ঠিক থাকে না। আর চাষাবাদ ও এজাতীয় অনেক কাজ ঋতুনির্ভর।

 

এ জন্য ভারতের মোগল সম্রাট আকবারের সময়ে প্রচলিত হিজরী চান্দ্র পঞ্জিকাকে সৌর পঞ্জিকায় রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।সম্রাট আকবর তার দরবারের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ আমির ফতুল্লাহ শিরাজীকে হিজরী চান্দ্র বর্ষপঞ্জীকে সৌর বর্ষপঞ্জীতে রূপান্তরিত করার দায়িত্ব প্রদান করেন। ৯৯২ হিজরী মোতাবেক ১৫৮৪ খৃস্টাব্দে সম্রাট আকবার এ হিজরী সৌর বর্ষপঞ্জীর প্রচলন করেন।

 

তবে তিনি ঊনত্রিশ বছর পূর্বে তার সিংহাসন আরোহনের বছর থেকে এ পঞ্জিকা প্রচলনের নির্দেশ দেন। এজন্য ৯৬৩ হিজরী সাল থেকে বঙ্গাব্দ গণনা শুরু হয়। ইতোপূর্বে বঙ্গে প্রচলিত শকাব্দ বা শক বর্ষপঞ্চির প্রথম মাস ছিল চৈত্র মাস। কিন্তু ৯৬৩ হিজরী সালের মুহাররাম মাস ছিল বাংলা বৈশাখ মাস, এজন্য বৈশাখ মাসকেই বঙ্গাব্দ বা বাংলা নববর্ষ হিশেবে পালন করা হয়। আর তাই বলা যায় প্রহেলা কোনো হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি নয়, এটি গোটা বিশ্বের বাঙ্গালিদের কাছে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে, এক সার্বজনীন উৎসব”

 

বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে এবারো বের হবে না মঙ্গল শোভযাত্রাসহ, বাঙ্গালির সংস্কৃতির এ উৎসবের সকল আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশেও প্রতিদিন হাজার হাজার করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে, প্রতিদিন কারো না কারো মৃত্যু সংবাদ নিয়ে আমাদের ঘুম ভাঙ্গছে। দেশে লকডাউনে হতদরিদ্র মানুষসহ মধ্যবিত্তরা অভাব অনটনে খুব খারাপ সময় পার করছে।

 

তারপরও সারাদেশে ঘরে বসেও প্রহেলা বৈশাখ পালন করছে বাঙ্গালিরা। তারা পুরাতন বছরের সব দুঃখ-কষ্ট,পরিতাপ -ঘ্রাণি ভুলে গিয়ে নতুন বছরকে গ্রহণ করছে সকল মঙ্গল ও সুন্দরের সাথে। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে তাল মিলিয়ে,আমিও প্রহেলা বৈশাখকে গ্রহণ করেছি ,” এসো হে বৈশাখ, এসো এসো। এসো হে বৈশাখ, এসো এসো। তাপস নিঃশ্বাস বায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে, বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক যাক যাক”। প্রহেলা বৈশাখ ও পবিত্র রজমানের এই দিনে গোটা বিশ্বের করোনা আক্রান্ত মানুষের সুস্থতা কামনা করছি। দেশ ও সমাজ থেকে করোনা মহামারিসহ সকল অপশক্তির বিনাশ কামনা করছি।

 

লেখকঃ মিজানুর রহমান সোহাগ

শিক্ষক ও সাংবাদিক


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
❌ নিউজ কপি করা নিষিদ্ধ ❌