ফেনী জেলা প্রতিনিধিঃ জাহিদ হাসান চৌধুরী স্বাধীনতা পরবর্তী বায়ান্ন বছরের ইতিহাসে ফেনীতে প্রথমবারের মত বিস্তৃত পরিসরে কোন আর্ট এক্সিভিশন প্রত্যক্ষ করছে ফেনী বাসী। স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের স্বনামধন্য চিত্রশিল্পীদের অংশগ্রহণ চিত্রপ্রদর্শনীর কলেবরে যুক্ত করেছে অনন্য মাত্রা। বিরানব্বইটি সৃজনশীল চিত্রকর্ম নিয়ে গ্রুপ আর্ট এক্সিবিশনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে গত ২২ জানুয়ারি। ফেনীর নবীন চন্দ্র সেন কালচারাল সেন্টারে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন একুশে পদক প্রাপ্ত বরেণ্য চিত্রশিল্পী আবদুল মান্নান। সাতদিন ব্যাপী চলমান এই প্রদর্শনীর পঞ্চম দিনেও দেখা গেছে দর্শনার্থীর আগ্রহী ভীড় । স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের ভিঁড় ছিলো চোখে পড়ার মত। মধ্য বয়সী এবং বয়স্কদের বিচরণও ছিলো উৎসাহ ব্যাঞ্জক। ফেনী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী নিশু এসেছে তার ছোট ভাই রিহানকে নিয়ে। রিহান নুরানী মাদরাসায় পড়ে। প্রদর্শনী দেখে সে খুব উৎফুল্ল। ভবিষ্যতে সে আটিস্ট হতে চায়। নিশুর ছবি আঁকার আগ্রহ প্রবল। জয় বাংলা শিরোনামে ছয় দফা মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা এই থিমের ছবি তার খুব ভালো লেগেছে। ছাগলনাইয়া চাঁদগাজী কলেজের প্রভাষক ইকবাল করিম এসেছেন তার দুই সন্তান আলভী ও আরাফকে নিয়ে। প্রদর্শনী দেখে তারা মুগ্ধ। ফেনী বীকন কলেজের প্রভাষক কবি জাহাঙ্গীর আলম তার সন্তান নিয়ে প্রদর্শনী দেখে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, একটি অসাধারণ আয়োজন প্রত্যক্ষ করেছি। ফেনী সরকারী কারিগরি বিদ্যালয় থেকে এসেছে একদল শিক্ষার্থী। তাদের অনেকর আক্ষেপ ফেনীতে কোন আর্ট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ফেনী সরকারি জিয়া মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী আইরিন ও নাতাশা বলেন, প্রদর্শনী দেখে আমরা আবেগাপ্লুত। নাতাশা ভালো ছবি আঁকে। শৈশবে অনেক পুরস্কারও পেয়েছে সে। ফেনীতে আর্ট কলেজ থাকলে নাতাশা আর্ট কলেজেই ভর্তি হতো বলে প্রতিবেদকের কাছে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন । সব ধরনের ছবিই তাদের ভালো লেগেছে। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের ছবি, ক্যালিগ্রাফি, এবং বৃক্ষমানব অবয়বে আঁকা ছবি।পঞ্চাশ উর্ধ্ব সৌদি আরব প্রবাসী সাবেক শিক্ষক নিজামুল ইসলাম চৌধুরী রিপন তিন বন্ধুসহ ফেনীর চিত্র প্রদর্শনী দেখতে এসেছেন কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড এলাকা থেকে। পত্র-পত্রিকায় সংবাদ দেখে ফেনীর প্রতি গভীর মায়ার টানে প্রদর্শনী দেখার আগ্রহ জাগে। গতকাল বিকেলে তিন বন্ধু রিপন, খোকন ও আজাদ মৃদুপায়ে বেশ আগ্রহ নিয়ে দেখছিলেন এক একটি ছবি। ছবি দেখার ফাঁকে নিজেদের মত করে পরস্পরে ভাব বিনিময় করে ছবি আর তার রংয়ের ভাষা বুঝবার চেষ্টা করছিলেন নিজেদের মত করে। প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম দেখার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনজনইএক বাক্যে বলে উঠেন আমরা মুগ্ধ হয়েছি। রিপন ফেনী সরকারি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র তার অনুভুতি ছিলো আলাদা। রিপন দৈনিক ফেনীর সময় প্রতিবেদককে জানান, রাজাঝির দীঘির পাড়ের কোর্ট বিল্ডিংয়ের পাশের ফাঁকা জায়গা গুলোতে অতীতকালে কত রকমের জটলা হতো। বিশেষ করে হরেক রকমের ক্যানভাসার, জোকার, খুদে যাদুকর তাদের বিড়িংগি দেখে চৌদ্দগ্রামের গ্রামের বাড়ীতে ফিরতে অনেক সময় সন্ধ্যা হয়ে যেত। সেরকম জায়গায় সাজানো গোছানো একটা আর্ট এক্সিবিশন দেখলাম। ঢাকার প্রদর্শনীর চাইতে কোনো অংশে কম মনে হয়নি। ফাইন আর্টস ফোরাম ফেনী’র আয়োজনে প্রদর্শনীতে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ২৩ জন চিত্র শিল্পীর তেল রং, জল রং, চারকোল, এক্রিলিক, ওরিয়েন্টাল সহ বিভিন্ন মাধ্যমে আঁকা চিত্রকর্ম ও ভাস্কর্য মিলিয়ে ৯২টি চিত্রকর্ম প্রদর্শীতে স্থান পেয়েছে। অংশগ্রহণকারী চিত্রশিল্পীরা হলেন- সমর মজুমদার, কাজি গোলাম কিবরিয়া, বিপ্লব রায়, কিশান মোশাররফ, মো. সাজ্জাদ ইসলাম, ফাহাদ হাসান কাজমী, নওশিন তারান্নুম, শাকিলা চয়ন, আশরাফুল হাসান, তৌহিদ শিমুল, নাহিদা শারমিন, কুদসিয়া ডালিয়া, মাজহারুল ইসলাম পাটোয়ারী, শাহনাজ আক্তার আঁখি, শিবলী হাওলাদার, তানজিনা আক্তার, সুভাষ সুত্রধর, মুন রহমান, আশিকুর রহমান, হায়দারী আন্দালুসিয়া, সূচি ধর, পিসি রুবেল ও সৌরভ শীল। প্রদর্শনী ঘিরে কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিককর্মীদের আনন্দঘন পদচারনায় ভিন্ন রকম পরিবেশ লক্ষ করা গেছে । ফেনীর কৃতি সন্তান বাংলাদেশ তথা বিশ্ব শিল্পাঙ্গনেও পরিচিত মুখ বরেণ্য চিত্রশিল্পী প্রয়াত কাইয়ুম চৌধুরী স্মরণে উৎসর্গ করা হয়েছে ফেনীর এই চারুকলা প্রদর্শনী। কাইয়ুম চৌধুরী সম্মাননা পদকে ভুষিত করা হয় প্রবীন চিত্রশিল্পী সমর মজুমদারকে। উদ্বোধনী ভাষণে শিল্পী আব্দুল মান্নান বলেন, ফেনীতে চিত্রশিল্পের এমন আয়োজন ইতিহাসের অংশ হবে। জেলা পর্যায়ে এমন একটি আয়োজন আমাকে মুগ্ধ করেছে। এ আয়োজনের মাধ্যমে ফেনীর তরুণ প্রজন্য শিল্প সাহিত্যে অনুপ্রেরণা পাবে। ফেনীতে একটি স্থায়ী আর্ট গ্যালারী প্রতিষ্ঠা করার জন্য তিনি প্রশাসনের সুদৃষ্টি প্রত্যাশা করেন।ফাইন আর্টস ফোরামের সভাপতি কাজী গোলাম কিবরিয়া বলেন, এ প্রদর্শনীতে ফেনীতে জন্ম গ্রহনকারী ২৩জন শিল্পী অংশগ্রহণ করছেন। ফাইন আর্টস ফোরাম ফেনী কেন্দ্রীক সংগঠন হলেও ফেনীতেই সীমাবদ্ধ না থেকে দেশ তথা বহির্বিশ্বের শিল্পে কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করে। ফাইন আর্টস ফোরামের পক্ষ থেকে শীঘ্রই শহীদ জহির রায়হান মিলনায়তন পূণঃনির্মাণের জোর দাবী ও বিলম্বের জন্য ক্ষোভ জানানো হয়। প্রদর্শনীতে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে লাইফ গার্ড ইন্স্যুরেন্স। প্রদর্শনী চলবে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য প্রদর্শনী গ্যালারী উন্মুক্ত থাকবে।