বিনোদন প্রতিবেদক:
শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মঙ্গলবার গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার তুমালিয়া ইউনিয়নে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে সদ্য প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা, অভিনেতা ও সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুককে। সেখানে বাবা আজগার হোসেন পাঠানের কবরের পাশেই শায়িত করা হবে ‘মিয়া ভাই’ খ্যাত এই অভিনেতাকে।
তার আগে সিঙ্গাপুরে প্রথম জানাজা শেষে মঙ্গলবার বাংলাদেশ সকাল ১০টা নাগাদ দেশে আনা হবে ফারুকের মরদেহ।নেয়া হবে জাতীয় শহীদ মিনারে।সেখানে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা তারকাকে দেয়া হবে গার্ড অব অনার। এরপর নেয়া হবে বহুদিনের কর্মস্থল এফডিসিতে। তারপর গুলশানের আজাদ মসজিদে জানাজা শেষে নেয়া হবে গাজীপুরে।
সিঙ্গাপুর থেকে হোয়াসঅ্যাপের মাধ্যমে ঢাকাটাইমসকে এসব খবর নিশ্চিত করেছেন প্রয়াত ফারুকের মেয়ে ফারিহা তাবাসসুম পাঠান।
দেড় বছরের বেশি সময় ধরে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে সোমবার বাংলাদেশ সময় সাড়ে ৮টায় মারা যান ফারুক। সেখানে তিনি লড়াই করছিলেন বিরল নিউরোলজিক্যাল রোগ জিবিএস (Guillain Barre Syndrome)-এর সঙ্গে।
২০২১ সালের ৮ মার্চ থেকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন ফারুক। নিয়মিত চেকআপের জন্য সেখানে যান অভিনেতা। সে সময় চেকআপের পর তার রক্তে ইনফেকশন ধরা পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে জানা যায় তিনি জিবিএস রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২১ সালের ১৫ মার্চ তার খিঁচুনি উঠলে তাকে নেয়া হয় আইসিইউতে। এর পাঁচ দিন পর হঠাৎ জ্ঞান হারালে তাকে লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়।
ওই সময় এক মাস ছয় দিন একেবারে অচেতন ছিলেন ফারুক। চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছিলেন না। ফলে এপ্রিলের শুরুতে ছড়িয়ে পড়ে তার মৃত্যুর গুজব। সে সময় এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তার পরিবার। গুজব না ছড়াতে সবাইকে অনুরোধ করেন।
ঠিক এক বছরের মাথায় গত বছরের ১০ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় গুজব ওঠে, ফারুক মারা গেছেন। দ্বিতীয় দফার এ গুজবের অবসান ঘটান চিত্রনায়ক জায়েদ খান। তবে এবার সত্যি সত্যি চলে গেছেন বাংলা চলচ্চিত্রের ‘মিয়া ভাই’।
এর আগে ২০২০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন ফারুক। বিশ্বজুড়ে তখন চলছিল করোনাভাইরাসের তাণ্ডব। লকডাউনের কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে সব দেশের ফ্লাইট ছিল বন্ধ। ফলে কার্গো বিমানের এক বিশেষ ফ্লাইটে সে সময় সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছিল ফারুককে।
ওই বছরের মাঝামাঝি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন এই সাংসদ-অভিনেতা। এক মাসেরও বেশি ধরে তিনি প্রথমে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসাপাতালে এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা করান। এরপর তার করোনা নেগেটিভ হয়। তবে শারীরিক জটিলতা যাচ্ছিল না। তাই বাধ্য হয়েই যেতে হয়েছিল সিঙ্গাপুরে। সে সময় সুস্থ হয়ে দেশে ফেরেন ‘মিয়া ভাই’।
তারও আগে ২০১২ সালের জুলাইয়ে এক মাস ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ফারুক। সে সময় তিনি কিডনির রোগে ভুগছিলেন। ব্যাংককে কয়েক মাস চিকিৎসা করিয়ে ২০১৩ সালের ৩০ আগস্ট ভর্তি হন সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে। সেখানে কয়েক মাস চিকিৎসা শেষে ২০১৪ সালের ৭ জানুয়ারি তিনি দেশে ফিরে আসেন। এবার আর ফিরলেন না।
ফারুকের প্রকৃত নাম আকবর হোসেন পাঠান দুলু। ১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট মানিকগঞ্জের ঘিওরে তার জন্ম। চলচ্চিত্রে এসেছিলেন ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ সিনেমার মাধ্যমে। অভিনয় করেছেন শতাধিক চলচ্চিত্রে। উল্লেখযোগ্য সিনেমা ‘লাঠিয়াল’, ‘সুজন সখী’, ‘নয়নমনি’, ‘সারেং বৌ’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সাহেব’, ‘আলোর মিছিল’, ‘মিয়া ভাই’।
এর মধ্যে ‘লাঠিয়াল’ সিনেমাটিতে অভিনয়ের জন্য ১৯৭৫ সালে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন ফারুক। ২০১৬ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আসরে তাকে দেওয়া হয় আজীবন সম্মাননা। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তিনি সবচেয়ে সফল ও সেরা নায়কদের একজন হিসেবে স্বীকৃত।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসন থেকে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ফারুক। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ক্ষমতাসীন এই দলটির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ১৯৬৬ সালে ছাত্রনেতা হিসেবে যোগ দেন ছয় দফা আন্দোলনে। সে সময় তার নামে ৩৭টি মামলা হয়। এরপর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন ফারুক।