মাইকেল নংরুম, জুড়ী (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের বনাখলা পুঞ্জির কয়েকটি পানের জুম দখলের ঘটনা ঘটেছে। বহিরাগত লোকজন জুমগুলো দখল করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার (২৮ মে) সকালের দিকে এই জুম দখলের ঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার (১ জুন) পর্যন্ত দখলদারদের ভয়ে পুঞ্জির লোকজন তাদের জুমে যেতে পারেননি। দখলের ঘটনায় পুঞ্জি প্রধান ও ছোটলেখা চা-বাগানের পক্ষ থেকে বড়লেখা থানায় দুটি পৃথক মামলা করা হয়েছে। এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে মঙ্গলবার (১ জুন) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) সাদেক কাউসার দস্তগীর ছোটলেখা চা-বাগান এলাকায় গিয়ে বনাখলা পুঞ্জির খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের সাথে কথা বলেন।
এসময় বড়লেখার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নূসরাত লায়লা নীরা, বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রতন দেবনাথ, স্থানীয় দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
পুঞ্জির বাসিন্দা ও চা-বাগান কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ছোটলেখা চা-বাগান কর্তৃপক্ষ চা চাষের জন্য ১ হাজার ৯৬৮ একর টিলাভূমি সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেয়। পরে তারা ২৭২ একর জমি খাসিয়াদের কাছে উপ-ইজারা দেয়। ২০০৭ সালে খাসিয়ারা ওই জমিতে বনাখলা পুঞ্জি (পল্লী) নামে বসতি স্থাপন করে। এরপর সেখানে পান চাষ শুরু করে। পুঞ্জিতে বর্তমানে ৩৬টি খাসিয়া পরিবারের দেড় শতাধিক সদস্য থাকে। প্রতিটি পরিবারের আলাদা পানের জুম আছে। গত ২৮ মে বোবারথল এলাকার আব্দুল বাছিত, পিচ্চি আমির, লেছই মিয়ার নেতৃত্বে ৪০-৫০ জনের একদল লোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুঞ্জিতে ঢুকে তিনটি পানের জুমের দখল করে নেন। এ সময় তারা সেখানে একটি অস্থায়ী ঘরও নির্মাণ করে। তখন জুমে থাকা খাসিয়াদের তারা তাড়িয়ে দিয়ে বলে এক সপ্তাহের মধ্যে তাদেরকে ১০ লাখ চাঁদা না দিলে তারা জুমে প্রবেশ করতে পারবে না।
এই ঘটনায় পুঞ্জির প্রধান (মান্ত্রী) নরা ধার ও ছোটলেখা বাগানের প্রধান টিলা করণিক মো. দেওয়ান মাসুদ রোববার থানায় পৃথকভাবে দুটি মামলা করেন।
বনাখলা পুঞ্জির মান্ত্রী নরা ধার বলেন, আমরা নিরীহ মানুষ। পান চাষ করে সংসার চালাই। জুম দখল করে চাঁদা দাবি করেছে। খুব ভয়ে আছি। আমাদের হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। জুমে যাইতে দিচ্ছে না। পুলিশের সার্কেল স্যারসহ অনেক আইছে। তারা বলেছে ব্যবস্থা নেবে। আমরা খুব কষ্টে আছি। দ্রুত জুমে যেতে না পারলে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।
বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল), সহকারী কমিশনার (ভূমি) বড়লেখাসহ আমরা ঘটনাস্থলে যাই। বনাখলা পুঞ্জির খাসিয়াদের সাথে কথা বলেছি। এই ঘটনায় দুটি মামলা হয়। একটি চাঁদাবাজি আরেকটি গাছ চুরি ও জায়গা দখলের। দখলদারদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে স্থানীয় চেয়ারম্যান ২৪ ঘন্টা সময় নিয়েছেন। যদি তিনি সরাতে না পারেন তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও বিজিবি যৌথভাবে আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের উচ্ছেদ করবে। খাসিয়াদের সর্বাত্মক আইনি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।