মোঃফারুক আহমেদ, মনোহরদী(নরসিংদী)প্রতিনিধি:
মনোহরদীতে কঠোর লকডাউন চলাকালীন সময়ে কর্মহীন অসহায় দুস্থ মানুষের পাশে দেখা যাচ্ছেনা স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের। সরকারের দেওয়া ত্রান সামগ্রী বিতরণের সময় তাদের উপস্থিতি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফটোসেশন লক্ষ করা যায়। এখানে উল্লেখ্য যে, মনোহরদী উপজেলার বারটি ইউনিয়নের মাঝে এগারটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মেয়র দলীয় নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছেন। করোনা মহামারীর প্রথম পর্যায়ে স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের বিশেষ করে মেয়র ও চেয়ারম্যানদের ভূমিকা ছিলো প্রশংসনীয়। তারা সরকারের দেওয়া ত্রান সামগ্রী ছাড়াও নিজের ব্যক্তিগত তহবিল হতে অসহায়দের পাশে দাড়িয়ে প্রশংসা কুঁড়িয়েছেন। কিন্তু এ বছর কঠোর লকডাউনে হাতে গুনা কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ব্যাতিত অন্য কাউকে এলাকাতে দেখা যাচ্ছেনা। সরেজমিনে গেলে এসকল ইউনিয়ন ও পৌরসভার জনগন জানায় করোনা মহামারীর প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারন করায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়া এর একমাত্র প্রধান কারন। অন্যদিকে ইউপি নির্বাচন করতে ইচ্ছুক চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ধারনা দলীয় প্রতিক নৌকা মার্কা পেলেই নির্বাচনে নিশ্চিত বিজয়,শুধু শুধু অসহায় দুস্থদের পিছনে টাকা খরচ করে লাভ নেই।
মনোহরদী পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে জনসাধারণের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মেয়র আমিনুর রশিদ সুজন ১৬ জানুয়ারী ২০২১ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পূর্বে করোনাকালীন সময়ে পৌর এলাকায় তার ভূমিকা ছিলো প্রশংসনীয়। নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মেয়র হওয়ার পরে করোনা মহামারীর সময় সরকারের দেওয়া অনুদান ছাড়া, অন্য কোন কার্যক্রমে লক্ষ করা যাচ্ছে না। পৌরবাসীর মখরুচক গল্প দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র হওয়ার জন্য এতো সাহায্য সহযোগীতা করেছিলো করোনার প্রথম ধাপে নির্বাচনের পূর্বে, কিন্তু করোনর দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচিত মেয়র তার রুপ যেন পালটে ফেলেছেন।
দূঃখ জনক হলেও সত্য যে, করোনাকালীন সময়ে বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা কঠোর লকডাউনে সরকারের নির্দেশিত নিয়ম অমান্য করে বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, মানছেনা সামাজিক দূরত্ব পরছেনা মাস্ক। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বড়চাপা ইউপি চেয়ারম্যান এম.সুলতান উদ্দিন, সরকারের নির্দেশ অমান্য করে শতাধিক লোকবল নিয়ে গ্রাম সালিশ করছিলো, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ.এস.এম কাসেম এর নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার সময় গাড়ি বহর দেখে অনেকে দিক বেদিক দৌড়ে পালিয়ে যায়। অন্য দিকে শুকুন্দী ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যান সাদিকুর রহমান শামীম স্থানীয় নারান্দী বাসট্যান্ডের পশ্চিম পাশে ইউপি সদস্য কমল এর ব্যক্তিগত অফিসে বসে শতাধিক লোক নিয়ে খোশ গল্পে মেতে ছিলো, সামনের রাস্তাদিয়ে যাচ্ছিলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে,সহকারী কমিশনার ভূমি,পুলিশ,বিজিবি,আনসার,গণমাধ্যম কর্মী সহ ভ্রাম্যমাণ আদালতের গাড়ি বহর। গাড়ি বহর দেখে সবাই পালিয়ে যায়, চেয়ারম্যান সাদিকুর রহমান শামীম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সালাম বিনিময় করে, সালাম বিনিময় করার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চেয়ারম্যানের মুখে মাস্ক না থাকায় কারণ জিজ্ঞেসা করেন। উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীরা একজন আরেক জনের সাথে আলাপচারীতা করেন চেয়ারম্যান নিজেই যদি মাস্ক ব্যবহার না করেন তাহলে সাধারণ জনগনই বা কেন মানবে সরকারী নির্দেশনা। দৌলতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাদিউল ইসলাম এর কার্যক্রম দেখলে মনেই হয়না করোনা নামক মহামারী শব্দটি দৌলতপুর ইউনিয়নে রয়েছে। সারা দেশে সরকার ঘোষিত লকডাউনে পণ্যবাহী গাড়ি ছাড়া অন্যান্য গাড়ি চলাচল সম্পূর্ণ নিষেধ, সেইখানে দৌলতপুরের চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। নদী খননের মাটি ও শিল্পপতি গিয়াস উদ্দিন সরকার এর চাচাতো ভাই বেনু, জননৈক পুলিশ কর্মকর্তার মামা শশুর ও সুদখোর কাজল এর নেতৃত্বে অবৈধ ভাবে উত্তোলিত বালু পরিবহনের জন্য শতশত ট্রলি ও ড্রাম ট্রাক চলাচল করে থাকে এবং এসকল পরিবহনে শতশত শ্রমিক কাজ করে,তাদের মুখে নেই কোন মাস্ক মানেনা কোন সামাজিক দূরত্ব। কোচেরচর মোল্লা বাজারে চেয়ারম্যান হাদিউলের ব্যক্তিগত অফিসে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মাস্ক ব্যবহার না করে অনেক লোকজন নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত আলাপচারিতায় ব্যস্ত থাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি সদস্য জানায়, করোনার মহামারী শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মাননীয় শিল্পমন্ত্রীর ছেলে মন্জরুল মজিদ মাহমুদ সাদী সাহেবের দেওয়া হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক,সাবান বিতরণ ছাড়া ব্যাক্তিগত তহবিল হতে হাদিউল ইসলাম চেয়ারম্যানকে কোন কিছু বিতরণ করতে দেখি নাই।
কঠোর লকডাউনে জনপ্রতিনিধিদের নিরব ভূমিকা প্রসঙ্গে মনোহরদী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াশীষ রায় বলেন, বর্তমান শিল্পমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন(এমপি) এর নেতৃত্বে আমরা মনোহরদী উপজেলা আওয়ামীলীগ ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বিগত বছর করোনার যখন প্রথম ধাপ তখন মনোহরদী উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করে প্রসংশা কুড়িয়েছেন , বিভিন্ন ইউনিয়নের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জীবন বাজি রেখে মানুষের সেবা করেছেন কিন্তু এবার কঠোর লকডাউনের সময় দুই এক জন জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা নিয়ে দেখা দিয়েছে সমালোচনা। আমি অনেকের সঙ্গে সরাসরি ও ফোনের মাধ্যমে এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসব মিথ্যা অভিযোগ বলে যানান তারা।
তিনি আরো জানান, আমি সকলকে আহবান জানিয়েছি, তারা যেনো নিজনিজ স্থানে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সকলকে স্বাস্থ্য বিধি মানতে উদ্ভোদ্ধ করে। পাশাপাশি অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে করোনা মহামারী মোকবেলায় যেন সাহায্য করে।