এইচ.এম.কাওছার আহমেদ
স্বাধীনতা আল্লাহর নিয়ামত। স্বাধীনতা যেমন মানুষের মৌলিক অধিকার, তেমনি ইসলামের মূল শিক্ষা। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) শুধু দাসদের মুক্ত করেই ক্ষান্ত হননি; তিনি দাসকে সন্তান বানিয়েছেন, তিনি ক্রীতদাসকে ভাইয়ের মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন, তিনি গোলামকে সেনা অধিনায়ক বানিয়েছেন। বংশানুক্রমিক দাসানুদাস কৃষ্ণবর্ণ হাবশি বিলাল (রা.)-কে মসজিদে নববির প্রধান মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন।
স্বাধীনতার স্বাদ পেয়ে আরব-অনারব, ধনী-দরিদ্র সবাই ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছে। ১৯৭১ সালের আজকের এ দিনেই লাখো মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ, এ দেশের মানুষ মুক্তি পায় পরাধীনতা থেকে। যাদের রক্তের বিনিময়ে,এবং ত্যাগের মহিমায় আজ লাল-সবুজের পতাকা
মোরা পেয়েছি তাদের সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছি।
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন হলো। এ আন্দোলনে বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলো। মাতৃভাষা মানুষের মৌলিক অধিকার। ইসলাম সব ভাষাকে সম্মান করতে শেখায়; কারণ, সব ভাষাই আল্লাহর দান। পবিত্র কোরআন শরিফে রয়েছে: ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে। (সূরা-৩০ রূম, আয়াত: ২২ ও ২১, পারা: ২১)।
তারপরও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী জনমতের বিপরীতে অবস্থান গ্রহণ করে আবারও মুক্তিপাগল জনগণকে পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ করে রাখতে চায়। কিন্তু এ দেশের জনগণ, যাদের ইমানে মুক্তির বাণী, বিশ্বাসে স্বাধীনতার ধ্বনি, তারা তা মানতে অস্বীকৃতি জানায়। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর পরাজয় বরণ করে জালিম শাহি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় লাভ করে মুক্তিকামী জনগণ। জন্ম হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের।
বিজয় কাঙ্ক্ষিত, বিজয় গৌরবের। কিন্তু বিজয় যদি হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট আর বিজেতারা যদি হন নীতিভ্রষ্ট; কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হীন স্বার্থ যদি পায় অগ্রাধিকার, তাহলে সে বিজয় প্রকৃত আনন্দ উপহার দেয় না। আমাদের প্রিয় হাবিব বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) যখন মক্কা বিজয় করেন, তখন আল্লাহ তাআলা তাঁকে নির্দেশনা প্রদান করেন: ‘যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দীনে প্রবেশ করতে দেবেন, তখন আপনি আপনার প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করুন; তিনি তো তওবা কবুলকারী।’ (সূরা-১১০ নাসর, আয়াত: ১-৩, পারা: ৩০)।
গভীর শ্রদ্ধা তাদের প্রতি ৩০-লক্ষ শহিদ ও বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ যে সকল বীর শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাঙালি জাতির গৌরব বিজয়ী লাল-সবুজের পতাকা। সাথে সাথে শ্রদ্ধা ভরে স্বরন করি ২-লাখ নির্যাতিত মা-বোনের প্রতি আমার সশ্রদ্ধ সালাম। ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির গৌরবের এই মহান দিনে সকল দেশ প্রেমের শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
লেখক শিক্ষার্থীঃসিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা।