মোঃ সিরাজুল মনির চট্টগ্রাম ব্যুরো।
চট্টগ্রামসহ সারাদেশে চলমান কঠোর লকডাউনের পঞ্চম দিন আজ। লকডাউন পরিস্থিতিতে সচল রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম। তবে গণপরিবহণ সংকট, পরিবহণ ব্যয় বৃদ্ধি, পাইকারি বাজারে বিক্রি কমে যাওয়া ও শ্রমিক সংকটসহ নানা কারণে পণ্য খালাস করতে পারছেন না আমদানিকারকরা। ফলে পণ্য খালাসে ধীরগতি নেমে এসেছে চট্টগ্রাম বন্দরে।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরে ৪৯ হাজার টিইইউএস কনটেইনার ধারণ করার ক্ষমতা রয়েছে। অথচ তারমধ্যে ৩৪ হাজারের বেশি টিইইউএস কনটেইনার এখনও পড়ে আছে বন্দরে। এসব কনটেইনারের সাথে নতুন আমদানিকৃত পণ্যের কনটেইনার যোগ হলে লকডাউন পরিস্থিতিতে কনটেইনারজট বেধে বন্দরে অচলাবস্থা তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এ ধরনের পরিস্থিতি সামাল দিতে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে, এমনটাই দাবি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের।
জানা গেছে, পবিত্র রমজানকে কেন্দ্র করে গত ১৫ দিনে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে বিপুল পরিমাণে পণ্য বোঝাই জাহাজ। এরমধ্যে শুধুমাত্র গত ১ এপ্রিল এসেছে ৪৫টি জাহাজ। তবে এই ৪৫টি জাহাজের মধ্যে দশটি জাহাজের মালও খালাস করা সম্ভব হয়নি।
গত ১ এপ্রিল দুটি জাহাজে এসেছে প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার ৫১৪ টন চিনি। একইদিন তিনটি জাহাজে করে প্রায় দেড় লাখ টন ভোজ্যতেল এসেছে। পাশাপাশি ২ এপ্রিল এসেছে অন্তত ১৪টি জাহাজ। এদিকে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে গত ৩ এপ্রিল ৩টি জাহাজ, ৪ এপ্রিল ৮টি জাহাজ ও ৫ এপ্রিল ২টি জাহাজ এসেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এভাবে আগামী ১৫ দিনে বন্দরে আরও অর্ধশত জাহাজ আসবে।
এর আগে গত ১৮ মার্চ দুটি জাহাজে করে ১ লাখ ১৪ হাজার ৮১৪ টন চিনি এসেছে। গত ২১ মার্চ ৫৯ হাজার ৯২৫ টন মোটর বোঝাই করে একটি জাহাজ ও গত ২৪ মার্চ প্রায় ৬৪ হাজার টন চিনি নিয়ে এসেছে একটি জাহাজ। পাশাপাশি শুধুমাত্র মার্চ মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১৫ হাজার টন খেজুর আসে।
বিগত দুই বছরের মার্চ মাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ২ লাখ ৩২ হাজার টন ভোজ্যতেল, ৩ লাখ ৫৯ হাজার টন চিনি ও ১ লাখ ২ হাজার টন মটর আমদানি করা হয়।
অপরদিকে ২০২০ সালের মার্চ মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার টন ভোজ্যতেল, ৪ লাখ ৫২ হাজার টন চিনি ও ৩০ হাজার টন মটর আমদানি করা হয়। সবমিলিয়ে রোজায় পণ্যের ঘাটতি পূরণ করতে এবার আগের চেয়ে তুলনামূলকভাবে আমদানির হার বাড়িয়েছেন আমদানিকারকরা।
চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম বলেন, ‘চলমান লকডাউন পরিস্থিতিতেও বন্দরের কাজ থেমে নেই। পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা যাতে কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন না হন সেদিকে আমরা নজর রেখেছি। তবে লকডাউন পরিস্থিতিতে পরিবহণ সংকটের কারণে বন্দরে পণ্য খালাসে কিছুটা গতি কমে এসেছে।
বন্দরের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘বন্দরে কনটেইনারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ফলে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। বন্দরের অভ্যন্তরে নামার পাইপলাইনে আছে ১ হাজার ৯২৭ টিইইউএস কনটেইনার। এসব কনটেইনার দ্রুত সরিয়ে নিতে প্রতিটি অফডকসহ বেসরকারি কনটেইনার ডিপোর্টস এসোশিয়েশনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে বন্দরের কাজে গতিশীলতা ফেরাতে বন্দরের অভ্যন্তরে থাকা কনটেইনারগুলো দ্রুত সরিয়ে নেয়া প্রয়োজন।