নিউজ ডেস্ক:
মো. মশিউর রহমান খান ওরফে বাবু (৪২)। তিনি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছেন। প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ও আদালতে জিআর-সিআর মিলিয়ে মামলা রয়েছে প্রায় ৯২টি।
মশিউর রহমান খান ওরফে বাবুকে গ্রেফতারের পর সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে পুলিশ। রাজধানীর মালিবাগে অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনের কক্ষের সামনে ভিড় করেন প্রায় শতাধিক ভুক্তভোগী। আসামিকে নিয়ে যাওয়ার সময় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ভুক্তভোগীরা আসামিকে গালিগালাজ করার পর মারতে তেড়ে যান। পরে বাবুকে হেলমেট পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন সিআইডি কর্মকর্তারা।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও দামি ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী নামমাত্র টাকায় কিনে বাকি টাকা পরিশোধ করতেন না বাবু। টাকা চাইতে গেলে ব্যবসায়ীদের হুমকি-ধমকি ও মারধর করতেন।
হাজী মো. দেলোয়ারে হোসেন নামের একজন ভুক্তভোগীর (৫৫) কাছ থেকে অভিযোগের পর সিআইডি ঢাকা মেট্রোর উত্তর বিভাগের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাকির হোসাইন ও টিম-১-এর সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জহিরুল হকের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএস থেকে মশিউর রহমান খান ওরফে বাবুকে গ্রেফতার করা হয়।
বুধবার (২ জুন) দুপুরে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, গ্রেফতার বাবু তার সহযোগীদের নিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে সন্ধান করে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। এরপর তাদের কাছ থেকে বড় বড় অংকের বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী কিনতেন। এরপর নামমাত্র মূল্য পরিশোধ করে অধিক পরিমাণ পণ্য নিতেন। পরবর্তীতে মূল্য পরিশোধের জন্য ব্যাংকের চেক দিলে পাওনাদাররা চেকের টাকা তুলতে না পেরে সর্বস্বান্ত হন।
অতিরিক্ত ডিআইজি আরও বলেন, বাবুর প্রতারণার কৌশল হিসেবে ছিল- বিভিন্ন জায়গায় সুন্দর করে ডেকোরেটেড অফিস সাজিয়ে নিজেকে আবরার গ্রুপের বায়ার হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতেন। চুক্তি অনুযায়ী পণ্যের মূল্য বাবদ ১০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত টাকা পরিশোধ করতেন। বাকি টাকা চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করবেন বলে জানালেও ভুয়া চেক দিতেন ব্যবসায়ীদের।
সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে টাকা ছাড়াই পণ্য নিতেন বাবু। আসামি বাবু অত্যন্ত সুচতুর ও প্রতারক। তিনি একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের মূলহোতা। দীর্ঘদিন ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন-চাল, ডাল, আটা, ময়দা, চিনি, তৈল, লবণ, মরিচ, হলুদ, বিভিন্ন মসল্লা থেকে শুরু করে প্রসাধনী সামগ্রী, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী যেমন- এসি, ফ্রিজ, টেলিভিশন, ফ্যান, কম্পিউটার ও ল্যাপটপ অফিসিয়াল যাবতীয় ব্যবহার সামগ্রী নিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে নিঃস্ব করেছেন।
সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রতারক মশিউর রহমান খান বাবু বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মালামাল কিনে নগদ টাকার বিনিময়ে সেগুলো বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। কিন্তু ব্যবসায়ীদের পণ্যের টাকা পরিশোধ না করে হয়রানি করতেন। এভাবে প্রতারণা করে প্রায় ৫০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেন।
বাবুকে গ্রেফতারের সময় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি সাদা রংয়ের হেরিয়ার টয়োটা জিপ, দুটি মোবাইল ও তিনটি কম্পিউটার জব্দ করা হয়।
অটোমেশন নামে ইলেকট্রনিক্স কোম্পানিতে কর্মরত ফাতেমা আক্তার মনি নামের এক ভুক্তভোগী জাগো নিউজকে জানান, দুই মাস আগে বাবু তাদের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকার ইলেকট্রনিক্স পণ্য কেনেন। বিনিময়ে বাবু টাকা না দিয়ে চেক দেয়। তবে চেকটি ব্যাংকে নিয়ে গেলে সেটি ডিজঅনার হয়।
মাহমুদ হাসান নামের একজন ইলেকট্রনিক ব্যবসায়ী জাগো নিউজকে জানান, তার কাছ থেকে ২২ লাখ টাকার এসি কিনেছিলেন বাবু। কিন্তু মাসের পর মাস পেরিয়ে পেলেও টাকা পরিশোধ করেননি তিনি। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন এসিগুলো বাবু কম দামে বিক্রি করে দিয়েছেন।
শহিদুল ইসলাম নামের একজন চাল ব্যবসায়ী বলেন, বাবুকে পেলে ছিঁড়ে ফেলব। সে আমার ব্যবসায়ের সব টাকা নষ্ট করেছে। বাকিতে মাল নিয়ে টাকা পরিশোধ না করে ভয়-ভীতি দেখিয়েছে। আমার কাছ থেকে ৭ লাখ ৪ হাজার টাকার চাল কেনার কয়েকমাস পর চেক দেয় সে। কিন্তু চেকটি ডিজঅনার হয়।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী জামিল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, গ্রেফতার বাবু অনেক ছোট-বড় ব্যবসায়ীকে পথে বসিয়েছে। মাল কেনার আগে বাবু ওয়ার্ক অর্ডার দিতেন। আমরা কোটেশন সাবমিট করতাম। এরপর কোটেশনের উপর বাবু লিখে দিত তারা ৩০ শতাংশ টাকা পরিশোধ করবেন, কিন্তু মাল নেয়ার পর একটি টাকাও পরিশোধ করতেন না বাবু।