মকিবুল মিয়া
সরকারি বাঙলা কলেজ (ঢাকা)
বর্তমান করোনা ভাইরাস COVID-19 সংক্রমণের ভয়াল থাবায় পুরো বিশ্ব আজ স্তব্ধ। চীনের উহান প্রদেশ থেকে শুরু হওয়া এই ভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে ব্যাপক। দেশে দেশে চলছে লকডাউন ঘরে বন্দী রয়েছে মানুষ। আক্রান্ত বাড়ছে প্রতিনিয়ত। এরই মধ্যে বাংলাদেশে মারণ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৮ লাখ ৮৮ হাজার ৪০৬ জনের বেশি মানুষ। মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছ ১৪ হাজার ১৭২ জনের।
লকডাউনে সব কিছু আজ স্তব্ধ। শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন আজ যাযাবর অবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়,কলেজে,স্কুল গুলোতে নেই কোন প্রাণের স্পন্দন সবই আজ মরুভূমি। প্রিয় ক্যাম্পাস গুলোতে নেই কোন কোলাহল, স্বপ্নের উচ্ছ্বাস নেই কোন শিক্ষার কার্যক্রম।শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ ১৫ টি মাস নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে তাঁরা পড়ালেখা থেকে রয়েছে দূরে।দিন দিন তাদের স্বপ্ন গুলোও যাচ্ছে দূরে সরে। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ মেধাশূন্যহীন রাষ্ট্রে পরিনত হবে আশঙ্কা অনেকের।
স্বপ্ন আজ স্বপ্নই যাচ্ছে থেকে। শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন আজ হুমকিস্বরূপ। হতাশায় কাটছে তাদের বদ্ধ ঘরে দিন। তাদের জীবন আজ অনিশ্চয়তার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত লাখো শিক্ষার্থী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা আসক্ত হচ্ছে ইন্টারনেটে খেলছে বিভিন্ন গেম এবং ফেসবুকে আসক্ত হয়ে পড়ছে ।এছাড়াও নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা যা আগামী বাংলাদেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।
শিক্ষার্থীদের আর্তনাদ শোনেনি রাষ্ট্র শোনেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।হাজার হাজার শিক্ষার্থী করেছে মানববন্ধন, তুলেছে স্লোগান, ‘ছাত্রসমাজ কে বাঁচান’, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিন’, শিক্ষা ‘প্রতিষ্ঠান খুলে দিন’, নয়তো গলায় দড়ি দিন। তবুও ভাঙেনি ঘুম আমার -এ রাষ্ট্রের এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।
কবিতার ভাষায়ঃ
তুমি এসেছো এ ভবে
যাবে না দূরে সরে
তোমার ভয়ে কাঁপছে
বাংলার শিক্ষা গুরু।
দিচ্ছেনা ভ্যাকসিন
খুলছেনা প্রতিষ্ঠান
সবকিছুই চলমান
হচ্ছে না শিক্ষার সমাধান।
তোমার ভয়ে সর্বহারা
বাংলার শিক্ষাবিদগণ
ধ্বংসে উঠছে মেতে
বাংলার শিক্ষাকে।
শিক্ষার আলো যাচ্ছে নিভে
বাংলার শিক্ষার্থীদের থেকে
বুকের চাপা কষ্ট নিয়ে
হচ্ছে সব দিনমজুরে।
চলচে ক্লাস
কিনছে নেট
খেলছে পাবজি, হচ্ছে পাজি
বাংলার শিক্ষার্থী।
অনিশ্চিয়তার ভবিষ্যৎ নিয়ে পার করছেন লাখো শিক্ষার্থী। তাদের হারিয়ে যাচ্ছে সুন্দর ভবিষ্যৎ। রসায়ন বিভাগের এক শিক্ষার্থী এবি আরিফ বলেনঃ
পড়াশুনা থেকে দূরে থাকায় মানসিক দুশ্চিন্তার পরিমান গানিতিক হারে বাড়ছে। বিশেষ করে আমাদের মত অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য চিন্তা একটু বেশিই। কখন পড়াশুনা শেষ করবো,কখন চাকরি করে নিজে আয় করবো এসব চিন্তা রাতে ঘুমাতে দেয় না। এছাড়াও আমরা যাতে দ্রুত পড়া শেষ করে সংসারের হাল ধরতে পারি আমাদের বাবা-মা সে স্বপ্ন দেখেন। তাই তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিকল্প পথ নাই। কিন্তু হাট-বাজার, অফিস-আদালত সবকিছু চললেও আমাদের কলেজ বন্ধ। তাই বাবা মায়ের স্বপ্ন, নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় মানসিক চাপ বেড়েই যাচ্ছে।স্বপ্ন গুলো আজ স্থবির হয়ে পড়েছে।
ব্যবস্হাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার মাসুদ বলেনঃ
মধ্যবিত্ত ঘরের শিক্ষার্থীরা আজ দিশেহারা। দিন দিন যেন তাদের স্বপ্নটা যাচ্ছে মরে। হতাশা যেন তাদের নিত্য সঙ্গী। অনেক শিক্ষার্থী বয়স শেষের দিকে কিন্তু চাকুরী পরীক্ষা দিতে পারছেনা। তারা কি করবে ভেবে কুল পাচ্ছে না। আবার অনেকে দু-এক বিষয়ের জন্য অনার্সের ফলাফল পাচ্ছে না। তারাও আছে চরম অনিশ্চয়তায়।বয়স বেড়ে যাচ্ছে কিন্তু শিক্ষা জীবন শেষ হচ্ছে না। স্কুল, কলেজমুখী অনেক শিক্ষার্থী যাচ্ছে ঝরে। পরিবারের তাগিদে কাজে যোগ দিতে হচ্ছে। অনেক মেয়েদের বাবা-মা বাল্য বিবাহ দিয়ে তাদের স্বপ্নের জলাঞ্জলি দিচ্ছে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর স্বপ্ন আজ স্তব্ধ।