মাইকেল নংরুম, জুড়ী (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় বাঁধ নির্মাণের নামে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন হাকালুকি হাওরের মালাম বিলের দক্ষিণ-পূর্ব পাশের খাসজমি থেকে জলজ বৃক্ষ নিধনের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। গত রোববার (২৭ জুন) উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নূসরাত লায়লা নীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেন। এতে ইজারার শর্ত ভঙ্গ করায় জলমহালের লিজ বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।
গত ৩০ মে হাকালুকি জাগরণী ইসিএ ব্যবস্থাপনা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্য ও মালাম বিল বনায়ন এলাকার পাহারাদার আবদুল মনাফ গাছ কাটার ঘটনায় বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি অভিযোগ দেন।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার (২৩ জুন) উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নূসরাত লায়লা নীরা সরেজমিনে জলজ বৃক্ষ নিধনের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় তাঁর সাথে ছিলেন বর্ণি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন, হাকালুকি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা মতিউর রহমান প্রমূখ।
এর আগে হাকালুকি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা মতিউর রহমান সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন দেন।
সূত্র জানিয়েছে, বড়লেখা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নূসরাত লায়লা নীরা সরেজমিনে সরকারি ইজারাকৃত মালাম বিলের ইজারাদার কর্তৃক দক্ষিণ-পূর্ব পাশের খাসজমিতে বাঁধ নির্মাণের জন্য মাটি খননকালে ও খননকৃত স্থানে বেশ কিছু পরিবেশবান্ধব হিজল গাছ বিনষ্ট হওয়ার প্রমাণ পেয়েছেন। পরিবেশবান্ধব গাছ বিনষ্ট করে ইজারাদার জলমহাল লিজ চুক্তিপত্রের ১১ নম্বর ও ২১ নম্বর এর (ক) ও (গ) নম্বর শর্ত ভঙ্গ করেন। এজন্য ইজারার শর্ত ভঙ্গের কারণে মালাম বিলের লিজ বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নূসরাত লায়লা নীরা প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে বুধবার (৩০ জুন) বিকেলে বলেন, ‘সরেজমিনে বাঁধ নির্মাণ ও গাছ কর্তনের সত্যতা পাওয়া গেছে। ইজারাদার জলমহাল লিজ চুক্তিপত্রের ১১ নম্বর ও ২১ নম্বর এর (ক) ও (গ) নম্বর শর্ত ভঙ্গ করেছেন। এজন্য লিজ বাতিরের সুপারিশ করা হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বুধবার (৩০ জুন) বিকেলে বলেন, ‘গাছ কাটার অভিযোগের প্রেক্ষিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতেছি। যারা গাছ কেটেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। এই ঘটনার খবর দেরিতে আমাদের কাছে আসে। ঘটনাটি জানার পরপরই আমরা তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেই। এছাড়া যে ক্ষতি হয়েছে তা কিভাবে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া যায় তার জন্য দ্রুত বৃক্ষ রোপনের উদ্যোগ নিয়েছি। নিকটবর্তী বিলের ইজারাদারদের ডাকা হয়। সেখানে সিএনআরএস, রেঞ্জ কর্মকর্তাও ছিলেন। বনবিভাগ থেকে হিজল-করচ চারা নিয়ে রোপন করা হবে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ইতিমধ্যে বেশকিছু গাছ লাগানো হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, গত মে মাসের শেষ দিকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন হাকালুকি হাওরের মালাম বিলের দক্ষিণ-পূর্ব পাশের খাসজমির হিজল-করচ-বরুণসহ নানা প্রজাতি এবং প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো প্রায় ২০ হাজার জলজ গাছ কেটে অবৈধ বাঁধ নির্মাণ করে জলমহালের লোকজন। এঘটনায় গত ২১ জুন পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শক নজরুল ইসলাম জলজ বৃক্ষ নিধনে সম্পৃক্ত ৭ ব্যক্তির নাম উল্লেখ ও আরো ১৫-২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন এবং প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালায় বড়লেখা থানায় মামলা করেন।