• শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৩৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম
মনপুরায় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু,নানা মহলের শোক প্রকাশ! ফেনী রিপোর্টার্স ইউনিটির ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত ভেড়ামারায় উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন’র ইফতার ও দোয়া মাহফিল বাংলাদেশ স্কুল বাহরাইনের উদ্যোগে মরহুম গোলাম রব্বানীর স্মরণে দোয়া ও ইফতার মাহফিল বাহরাইনে আল হেরা শিল্পী গোষ্ঠীর ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত গণতন্ত্র সম্মেলনের উদ্বোধন করলেন – জো বাইডেন চতুর্থ মেয়াদে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করবে – ব্লুমবার্গ হজ্ব যাত্রীদের নিবন্ধনের সময় বাড়ালেন ধর্ম মন্ত্রণালয় আ. লীগের নেতৃত্বেই দেশে ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে: ওবায়দুল কাদের পরিবেশ মন্ত্রীর নির্দেশের পর সড়কের কাজ শুরু

হাকালুকি হাওরে ২০ হাজার বৃক্ষ নিধন; হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য

দৈনিক আমাদের সংগ্রাম | পত্রিকা..... / ১৬১ জন পড়েছে
প্রকাশিত সময়: সোমবার, ২১ জুন, ২০২১

মাইকেল নংরুম, জুড়ী (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি:

 

হাকালুকি হাওরের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার (ইসিএ) মালাম বিলের পাড়ের হিজল-করচসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ২০ হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গাছগুলো পরিবেশ অধিদপ্তরের অর্থায়নে সৃজিত এবং প্রাকৃতিকভাবে জন্মেছে। অভিযোগ উঠেছে, মালাম বিলের বাঁধ নির্মাণের নামে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ইজারাদারের লোকজন গাছগুলো কেটে নিয়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে হাকালুকি হাওরের জীববৈচিত্র্য। ওই বিলটি মৌলভীবাজারের বড়লেখা অংশে পড়েছে।

 

এ ঘটনায় সম্প্রতি হাকালুকি ইসিএ ব্যবস্থাপনা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্য ও জলজ বনের পাহারাদার মো. আব্দুল মনাফ ৭ জনের বিরুদ্ধে বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের অনুলিপি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী, পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসককে দেওয়া হয়েছে। এদিকে এই ঘটনায় রহস্যজনক কারণে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এখনও কোনো আইনি পদক্ষেপ নেননি সংশ্লিষ্টরা। এতে হাওরপারের সাধারণ মানুষ ও পরিবেশবাদীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিষয়টি তদন্ত করে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

 

অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাকালুকি হাওরের অর্ন্তভূক্ত বড়লেখা উপজেলার অধীনে মালাম বিলের (মৎস্য জলাশয়) আয়তন ৪২৮.৯২ একর। ১৪২৭ বাংলা হতে ১৪৩২ বাংলা সন পর্যন্ত সময়ের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ২১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৪৩ টাকায় মালাম বিলটি ইজারা নিয়েছে বড়লেখা উপজেলার মনাদি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। পরিবেশ অধিদপ্তর ২০০৩ সাল হতে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থায়নে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার (ইসিএ) মালাম বিলের (কান্দির) পাড়ে সরকারি ভূমিতে হিজল, করচ, বরুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ বৃক্ষ রোপণ করে। এছাড়া প্রাকৃতিকভাবে সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ বেড়ে ওঠে। বর্তমানে প্রাকৃতিক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সৃজিত জলজ উদ্ভিদগুলো ১০-১৫ ফুট উচ্চতার হয়েছে। যা হাকালুকি হাওরের ইসিএ এলাকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবরোধে বিশেষ অবদান রাখছে।

 

গত ২৭ মে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ইজারাদারের লোকজন বিলের বাঁধ নির্মাণের নামে বিলের পাড়সহ প্রায় ১২ বিঘা জমির প্রায় ২০ হাজার গাছ অবৈধভাবে কেটে নেয়। এরপর তারা সেখানে ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করেছে। এতে হাওরের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।

 

হাকালুকি হাওরের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণকর্মী (বনায়ন পাহারাদার) আব্দুল মনাফ ও আরফান আলী বলেন ‘মালাম বিলের ইজারাদার সমিতির লোকজন বর্ণি ইউনিয়নের কাজিরবন্দ গ্রামের জয়নাল উদ্দিন, মক্তদির আলী, মশাইদ আলী, রিয়াজ উদ্দিন, কালা মিয়া, সুরুজ আলী, মনাদি গ্রামের জয়নাল উদ্দিন প্রমুখদের নিয়ে এক্সাভেটর দিয়ে মে মাসের প্রথম দিকে বিলের দক্ষিণ ও পূর্ব পাশের সরকারি ভূমির জলজ বৃক্ষ নিধন করে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। আমরা বাঁধা দিলে তারা তা মানেনি। এছাড়া বিলের পাড়ের গাছ কেটে অনেকেই বোরো চাষের জমি তৈরী করছে। এ ঘটনায় ৭ জনের নামে ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’

 

মনাদি মৎস্যজীবী সমিতির পরিচালক জয়নাল উদ্দিন বলেন, ‘জলমহাল ইজারায় শুধুমাত্র মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নাম ব্যবহার করা হয়। তা সকলেই জানেন, প্রভাবশালীরা বিনিয়োগ করেন। বিনিয়োগকারীরাই এখানকার গাছ কেটেছেন, বাঁধ দিয়েছেন। যদিও কাজটা মোটেও ঠিক হয়নি। বিষয়টি প্রশাসনের সঙ্গে মিটমাট করা হবে বলে শুনেছি।’ কারা গাছ কেটেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

 

বন বিভাগের হাকালুকি বিটের দায়িত্বে থাকা জুনিয়র ওয়াইল্ডলাইফ স্কাউট তপন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘জলা বনের পাহারাদারের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বনায়নটি পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের। তাই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে অবগত করেছি। বিষয়টি তাদের দেখার কথা।’ পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের সহকারি পরিচালক মো. বদরুল হুদা রোববার (২০ জুন) বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, ‘গাছকাটার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। শীঘ্রই জায়গাটি পরিদর্শন করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

এ ব্যাপারে বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী রোববার (২০ জুন) বিকেলে বলেন, গাছ কাটার ঘটনাটি আমার যোগদানের আগেই ঘটেছে। এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। কে বা কারা গাছগুলো কেটেছে তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
❌ নিউজ কপি করা নিষিদ্ধ ❌